এক ব্যক্তির দু’বার করোনা সংক্রমণ! ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ঘটনা, তবে কীভাবে তৈরি হবে ইমিউনিটি? তদন্তে WHO

পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও করোনা আক্রান্তের শরীরে ফের মিলছে কোভিড-১৯ ভাইরাস! চিন, জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়াতেও একই ঘটনায় কপালে ভাঁজ বিশ্বের চিকিৎসক এবং গবেষকদের।
জাপান, চিনের পর এবার দক্ষিণ কোরিয়া। একই ব্যক্তির দু’বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হল, একজনের দু’বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে তারা তদন্ত করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স হু-র এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, তারা একই ব্যক্তির দু’বার করোনা সংক্রমণের রিপোর্ট নিয়ে অবগত। ওই নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা চালাবেন বিশেষজ্ঞরা।
কিছুদিন আগেই জাপানের ওসাকা এবং চিনের চেংড়ু শহরে বহুদিন পর্যবেক্ষণে রেখে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছিল দুই করোনা আক্রান্তকে। তারপরও তাঁরা ফের করোনায় আক্রান্ত হন। গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মোট ৯১ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ফের তাঁদের শরীরে করোনা পজিটিভ মিলেছে।

কী বলছে WHO এর গাইডলাইন? 

করোনা সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, চিকিৎসার মাধ্যমে কোনও কোভিড-১৯ আক্রান্ত সেরে ওঠার পর দু’বার তাঁর টেস্ট করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা অন্তর দু’বার এই পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই রোগীকে ডিসচার্জ করতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সেভাবেই দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েকজন করোনা আক্রান্তকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁরা ফের করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। যা নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসক ও গবেষকরা।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯১ জন করোনা আক্রান্ত ফের এই ভাইরাসের শিকার

গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার মোট ৯১ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ফের তাঁদের শরীরে করোনা পজিটিভ মিলেছে বলে জানায় সে দেশের সরকার। কোরিয়া সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (KCDC) এর ডিরেক্টর জিয়ং উন কায়ং বলছেন, আক্রান্তরা ফের সংক্রামিত হওয়ার বদলে তাঁদের শরীরে এই ভাইরাস পুনরায় সক্রিয় হয়ে থাকতে পারে।
আরোগ্যের পর দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়েছেন নাকি তাঁরা পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য অফিসাররা।
প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় ইমিউনিটির মাধ্যমে যখন অতিমারি করোনার প্রকোপ কমার আশা করা হচ্ছে, তখন দুনিয়াজুড়ে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে, সুস্থ হওয়ার পরও ফের এই মারণ ভাইরাসের শিকার হওয়ার বিষয়টি।
শুধু দক্ষিণ কোরিয়ায় গত সোমবার এমন নতুন করে করোনায় শিকার হওয়ার মতো ৫১ টি কেস সামনে এসেছে বলে রয়টার্স সূত্রে খবর। ৭ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত আরোগ্য লাভ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। যার মধ্যে ৯১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। কোরিয়ার গুরো মেডিক্যাল হাসপাতালের চিকিৎসক ও অধ্যাপক কিম উ জু রয়টার্সকে জানান, ৯১ সংখ্যাটা সবে শুরু, সময়ের সঙ্গে এমন আরও বাড়বে এই ধরনের কেস। তাঁরও মত, এই নতুন করে আক্রান্তের ঘটনা দ্বিতীয়বার আক্রমণের চেয়ে ভাইরাসের পুনরায় সক্রিয়তা হতে পারে। কোভিড-১৯ টেস্ট ঠিকভাবে না হওয়াও এর কারণ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণটা যাই হোক, আরোগ্যের পর আবার দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপার নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত চিকিৎসক মহল।

বিশ্বব্যাপী করোনার রিপোর্ট ও বিশেষজ্ঞদের মত 

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৯০ হাজার করোনা আক্রান্ত সেরে উঠেছেন। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিসের ডিরেক্টর ডাঃ অ্যান্টনি ফাউসির কথায়, যাঁরা করোনা থেকে সেরে উঠছেন, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়, যাতে দ্বিতীয়বার এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম হন তাঁরা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে আরোগ্যের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি না হওয়ার প্রমাণও মিলছে সমীক্ষায়। যা নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসক ও গবেষক মহল।

Comments are closed.