রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকার মেগা রাইটস ইস্যু গত ১০ বছরে বিশ্বের সমস্ত নন-ফাইনান্সিয়াল সংস্থার মধ্যে বৃহত্তম৷
শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ Dealogic-এর তথ্য অনুযায়ী, এত বড় অঙ্কের রাইটস ইস্যু গত ১০ বছরে বিশ্বের কোনও নন-ফাইনান্সিয়াল সংস্থা করেনি৷
সোমবারই মুকেশ আম্বানীর সংস্থার মেগা রাইটস ইস্যু ১.১ গুণ ওভার সাবস্ক্রাইব করে যায় বা প্রয়োজন ছাপিয়ে ওঠে৷ রিলায়েন্সের আগে ২০১৮ সালের জুন মাসে এমন বড় অঙ্কের সস্ত্ব ইস্যু করেছিল বেয়ার এজি নামে এক সংস্থার।
প্রসঙ্গত, শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত ৫৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকার রাইট শেয়ার কেনার সুযোগ দেয় রিলায়েন্স। গত ২০ মে থেকে ৩ জুনের মধ্যে এই সুযোগ পান রিলায়েন্সের শেয়ার হোল্ডাররা। গত তিন দশকে এই প্রথম এত বড় মাপের শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিল তারা।
অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে রাইট শেয়ার বা সত্ত্বের শেয়ার ইস্যু করে থাকে কোনও কোম্পানি। এক্ষেত্রে শেয়ার ক্রয় কিংবা বিক্রিতে অগ্রাধিকার পান রাইট শেয়ারহোল্ডাররা। কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয় বলে খুবই লাভজনক ধরা হয় রাইট শেয়ারকে। রিলায়েন্সের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৪ শতাংশ ছাড়ে রাইট শেয়ার কেনার সুযোগ পান শেয়ার হোল্ডাররা।
২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর সবচেয়ে বেশি অঙ্কের রাইটস ইস্যু ছিল HSBC-র৷ ২০০৯ সালের এপ্রিলেও ১৯.৫৭ বিলিয়ন ডলারের রাইটস ইস্যু করেছিল তারা৷ এছাড়া ২০১০ সালে ডয়েশ ব্যাঙ্ক ১৩.৯৬ বিলিয়ন ডলারের রাইটস ইস্যু করেছিল৷ ওটাই ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম৷
এদিকে এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম রাইটস ইস্যু ছিল ব্যাঙ্ক অফ চায়নার। ২০১০ সালে তাদের রাইটস ইস্যুর পরিমাণ ছিল ৮.৯৬ বিলিয়ন ডলারের৷ কিন্তু এই সবকটিই ছিল ব্যাঙ্কিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ফিনান্সিয়াল কোম্পানি৷ আর এখানেই রিলায়েন্সের সঙ্গে তার মূল পার্থক্য৷
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯৯১ সালে শেষবার জনসাধারণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য কনভার্টেবল ডিবেঞ্চার ইস্যু করেছিল৷ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানী বছর খানেক আগে জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সংস্থার সব ঋণ শোধ করা তাঁদের লক্ষ্য। মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে রিলায়েন্সের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা৷ হাতে নগদের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা৷ তার ফলে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা৷ এই পরিস্থিতির মধ্যে কিছুদিন আগেই রিলায়েন্স তার ডিজিটাল ইউনিট জিও প্ল্যাটফর্মের কিছু অংশে ফেসবুক ও বেসরকারি ইক্যুইটি ফান্ডকে অংশীদার করেছে৷ বহুদিন ধরেই সৌদি আরবের তেল সংস্থা অ্যারেমকো-র সঙ্গে ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে পঞ্চম অয়েল-টু-কেমিক্যাল ব্যবসা বিক্রির বিষয়ে আলোচনা চলছে৷
সোমবার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মেগা রাইটস ইস্যু ১.১ গুণ ওভারসাবস্ক্রাইবড হয়৷ সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত শেয়ার বাজারের ইস্যু সাবস্ক্রিপশন ডেটা বলছে, রিলায়েন্স রাইটস শেয়ারের জন্য মোট দর উঠেছে ৪৬.০৪ কোটি টাকা৷
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা বিপুল৷ শুধু রিটেলে রয়েছে ২৫.৪ লক্ষ শেয়ারহোল্ডার, এছাড়া দেশ বিদেশ মিলে ১ হাজার ৭০০-রও বেশি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। সংস্থার দাবি, করোনা সঙ্কটের মধ্যেও রিলায়েন্সের উপর যে শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা রয়েছে, তা প্রমাণিত।
Comments are closed.