কেন্দ্রের একাধিক পদক্ষেপে সঙ্কটে মুকেশ আম্বানীর রিলায়েন্স

কেন্দ্রের একাধিক পদক্ষেপে বিপাকে মুকেশ আম্বানী। ২০২১ সালের মধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে সম্পূর্ণ ঋণমুক্ত করার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ করেছিলেন মুকেশ আম্বানী। যার মধ্যে অন্যতম ছিল সৌদি আরবের তেল কোম্পানিকে রিলায়েন্সের শেয়ার বিক্রি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে পিটিশন দিয়ে এই শেয়ার বিক্রি মুলতুবি রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, মুকেশের তেল পরিশোধন, টেলি কমিউনিকেশন ও খুচরো ব্যবসাও কর প্রস্তাবের ফলে বাধার মুখে পড়েছে। ঠিক কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ?

অ্যারামকো শেয়ার বিক্রিতে দেরি
গত বছরের অগাস্ট মাসে মুকেশ আম্বানী তাঁর সমস্ত শেয়ারহোল্ডারকে জানান, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ তার তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল ইউনিটের ২০ শতাংশ বিক্রি করছে সৌদির অ্যারামকো সংস্থার কাছে। এর ফলে রিলায়েন্সের হাতে প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার উঠে আসার কথা। আম্বানীর কাছে এই শেয়ার বিক্রি ছিল যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ২০১৯ সালের মার্চ মাসের শেষে তাঁর সংস্থার মোট ঋণ ছিল আনুমানিক ২২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এখানেই বাধা এসেছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। গত ডিসেম্বর মাসে আদালতে একটি পিটিশনে সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবিত শেয়ার বিক্রি বন্ধের আবেদন করা হয়। সরকারের দাবি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের যথেষ্ট সম্পত্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে আম্বানীর সংস্থা ও তার অংশীদারদের মধ্যেকার মুনাফা ভাগ নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব মিটে যেতে পারে। যদিও মোদী সরকারের এই দাবি আইনত সমর্থনযোগ্য নয় বলে দাবি করেছে আম্বানীর সংস্থা। তাদের পাল্টা দাবি, আদালতে সরকারের পিটিশন খারিজ হয়ে যাবে। এদিকে চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই অ্যারামকোর সঙ্গে লেনদেন-সহ বেশ কিছু আইনি কাজ সেরে নিতে চেয়েছিল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু সরকার পক্ষের পিটিশনের জেরে সেই প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধের মুখে বলে খবর।

আয়কর তদন্ত
সূত্রের খবর, আম্বানী পরিবারের কয়েকজন বিশাল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছেন, এমনই অভিযোগে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় আয়কর দফতর। ২০১১ সালে ফ্রান্সের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি তথ্য দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, প্রায় ৭০০ ভারতীয়ের বিদেশি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সম্প্রতি তার তদন্তে সক্রিয়তা বাড়ছে বলে খবর। কর ফাঁকির মতো অভিযোগে ভারতে তদন্ত খুব সাধারণ ব্যাপার হলেও এবং তাতে রাজনৈতিক প্রভাবেরও অভিযোগ থাকার কথা উঠে এলেও এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির পরিবারের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির তদন্ত বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এদিকে নতুন বাজেট ঘোষণার পর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ শুল্ক সংক্রান্ত অসুবিধার মুখেও পড়েছে। পলিয়েস্টার তন্তু তৈরি করতে একপ্রকার কেমিক্যল লাগে যার সবচেয়ে বড় উৎপাদক সংস্থা হল রিলায়েন্স। কিন্তু নয়া বাজেটে আমদানি সংক্রান্ত কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়ায় পর অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে এখন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে আম্বানীর সংস্থাকে। তাছাড়াও ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্সেও পরিবর্তন আনার কথা ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। যার ফলে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো একাধিক বড় সংস্থা যারা ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের কাছে বিভিন্ন ইউনিট বিক্রি করে পুঁজি বাড়ায়, তারা বাধার মুখে পড়েছে। ফলে সংস্থাকে ঋণমুক্ত করার যে একাধিক পদক্ষেপ করেছেন মুকেশ আম্বানী, তা বড়সড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রের একাধিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপে। এমনটাই মনে করছে দেশের শিল্প মহল।

Comments are closed.