রাশিয়ায় করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শেষ, একমাসের মধ্যে ট্রায়াল শেষ করার দাবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের
বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় কোটি, মৃত্যু হয়েছে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের। এই পরিস্থিতিতে কি আশার আলো দেখাচ্ছে রাশিয়া? মস্কোর সেচেনভ ফার্স্ট স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি জানাল তাদের আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল সফল হয়েছে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক সূত্রে খবর, মাত্র এক মাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন গবেষণা।
জুনের মাঝামাঝি ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছিল মস্কোর সেচেনভ ইউনিভার্সিটি। রাশিয়ার ইন্সটিটিউট অফ ট্রান্সন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির ডিরেক্টর ভাদিম তারসোভ জানান, মানব শরীরে এই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা, কিংবা কতটাই বা নিরাপদ, হাতেকলমে তা দেখার জন্যই ট্রায়াল করা হয়েছিল। যার ফলাফল সম্পূর্ণ ইতিবাচক। এই ভ্যাকসিনের ডেভেলপের দায়িত্বে রয়েছে মস্কোর এপিডেমিওলজি প্রতিষ্ঠান গামালেই ইনস্টিটিউট।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে শতাধিক ভ্যাকসিন প্রস্তুতির কাজ চললেও, এই প্রথম কোনও গবেষণাগার বা সংস্থা হিউম্যান ট্রায়ালে সাফল্য পাওয়ার দাবি করল। রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ ট্রান্সন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির ডিরেক্টর ভাদিম তারাসোভকে উদ্ধৃত করে স্পুটনিক জানিয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের প্রথম দলকে আগামী বুধবার ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। দ্বিতীয় দলটি আগামী ২০ জুলাই বাড়ি ফিরতে পারবেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার গামালেই ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি করোনার এই ভাকসিনটি তৈরি করেছে। বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারাই স্বেচ্ছাসেবকদের উপরে এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করল বলে দাবি ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
সেচেনভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টটিউট অফ মেডিক্যাল প্যারাসাইটোলজি, ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ভেক্টর বর্ন ডিজিসেস এর ডিরেক্টর অ্যালেক্সজান্দ্রা লুকাসেভ জানিয়েছেন, ট্রায়ালের এই পর্যায়ের মূল লক্ষ্য ছিল মানব শরীরে এই ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ তা খতিয়ে দেখা। তা সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘এই ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ। ক্লিনিক্যাল টেস্টেই তা প্রমাণিত।’ এই ভ্যাকসিনটির উপর আরও ব্যাপক গবেষণার ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে রুশ বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এর আগে রেমডেসিভির নিয়ে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। পরে ইতালি দাবি করেছিল, তারা আবিষ্কার করে ফেলেছে করোনার টিকা। সেই টিকা পরীক্ষার পর আশানুরূপ ফল মিলেছে বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের। এর আগেও একাধিকবার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির খবর সামনে এসেছে। আবার পরে তা হতাশও করেছে। তবে রুশ বিজ্ঞানীদের এই দাবি সত্যি হলে করোনার বিরুদ্ধে চলতি যুদ্ধে জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সারা পৃথিবী যখন ভাইরাসের আবহে জর্জরিত তখন রাশিয়ার এই জীবনদায়ী গবেষণাই ভরসা জোগাচ্ছে বিশ্বের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের। সাধারণ মানুষকে দেখাচ্ছে আশার আলো।
Comments are closed.