নাগরিকপঞ্জির খসড়া থেকে বাদ সাহিত্য আকাদেমি প্রাপ্ত, নাম নেই শহিদের পরিবারের, অসমে ক্রমেই বাড়ছে এনআরসি উত্তাপ
বাঙালি হিন্দু এবং মুসলমানের পর এবার গোর্খা। অসমে এনআরসি উত্তাপ ক্রমেই মাত্রা ছাড়ানোর পথে। নাগরিকপঞ্জির সাম্প্রতিকতম খসড়া থেকে এবার বাদ গেলেন অসমে বসবাসকারী গোর্খাদের একাংশ। কার্যত বিদেশি হয়ে গেলেন, সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কার প্রাপ্তও।
ভারতীয় গোর্খা পরিষদের অসম শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সম্প্রদায়ের বহু মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জির খসড়া থেকে বাদ পড়েছে। সম্প্রতি নাগরিকপঞ্জির নতুন খসড়ায় ১ লক্ষ ২ হাজার মানুষের নাম বাদ পড়েছে। গোর্খা পরিষদের দাবি, এই নবতম খসড়ায় বাদ গিয়েছে বহু গোর্খা শহিদ পরিবার, স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং এক সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কার প্রাপ্তের নাম।
ভারত সরকার সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কারে সম্মানিত করেছিল দুর্গা খাটিওয়াডাকে। নতুন খসড়ায় বাদ গিয়েছে তাঁর নাম। ১৯৫১ সালের এনআরসিতেও দুর্গা খাটিওয়াডার বাবা অভিনারায়ণ খাটিওয়াডার নাম বাদ গিয়েছিল।
‘আমার মেয়ে বজয়ন্তী দেবী অসমের প্রথম মহিলা শহিদ। আমি নিজে বিধানসভায় ভোটে লড়েছি। অথচ আমার পুত্রবধূ এবং দুই নাতির নামই অতিরিক্ত খসড়া তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। এটা আমার মেয়ের বলিদানকে অসম্মান’। বলছেন, নবতিপর অমর উপাধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামী ছবিলাল উপাধ্যায়ের দৌহিত্রী মঞ্জু দেবীর নামও খসড়া তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। এই পরিবারেরই সদস্য স্বরূপ উপাধ্যায় ১৯৯১ সালে তেজপুর থেকে ভোটে জিতে লোকসভাতেও গিয়েছেন।
১৮২০ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে গোর্খারা অসমে এসেছিল বার্মার হানাদারদের হঠিয়ে অসমকে রক্ষা করতে। তারপর অনেকেই ভালোবেসে থেকে গিয়েছেন অসমেই। এরকমই প্রায় দেড় লক্ষ গোর্খা মানুষের নাম এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দু’শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অসমের মাটিতে বসবাস করা গোর্খা মানুষরা বুঝতে পারছেন না কেন তাদের নাম বাদ দেওয়া হল। দাবি গোর্খা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দহলের। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সমস্ত নথি এবং তথ্য একত্রিত করে তারা সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তৈরি হচ্ছেন। এনআরসি শুনানিতে ভারতীয় গোর্খা পরিষদ অন্যতম পক্ষ। ফলে দ্রুত বিষয়টি শীর্ষ আদালতের গোচরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশ দহল। সংগঠনের অন্যতম নেতা নন্দকিরাতি দেওয়ানের দাবি, এনআরসি শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ সাফ বলে দিয়েছিলেন, ‘একজন গোর্খা মানুষের নামও এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া উচিত নয়’।
এর আগে নামের তালিকা নিয়ে একইরকম বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলেন অসমে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দু এবং মুসলমান। এমন কী কার্গিল যুদ্ধে অংশ নেওয়া মহম্মদ সানাউল্লাহকে বিদেশি তকমা দিয়ে কোঁকড়াঝাড় ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি রাখা হয়। এবার প্রকাশ্যে এল গোর্খা মানুষদের বিশাল সংখ্যায় নাম বাদ যাওয়ার ঘটনা।
Comments are closed.