গোবর, গোমূত্র ও গরুর দুধ থেকে ওষুধ, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু ইত্যাদি তৈরি করা ‘অবৈজ্ঞানিক’, গোমূত্র ও গোবর নিয়ে গবেষণায় কেন্দ্র বরাদ্দ অর্থ প্রত্যাহার করুক, এমন দাবি তুলে ১১০ জন বিজ্ঞানী বিবৃতি দিলেন কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের কাছে।
সম্প্রতি গোবর ও গোমূত্র থেকে ক্যান্সারের ওষুধ সহ দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্য প্রস্তুত ও গবেষণার জন্য প্রকল্পের কথা জানায় কেন্দ্র। ওই প্রকল্পে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। বুধবার দেশের একশোর বেশি বিজ্ঞানী কেন্দ্রের ওই প্রকল্প প্রত্যাহারের আবেদন করে চিঠি লেখেন। তাঁরা পরিষ্কার জানান, গোমূত্র ও গোবর থেকে ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য প্রস্তুত করা ‘অবৈজ্ঞানিক’। প্রকল্পটি নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক (ডিএসটি) জারি করেছে তা ‘ত্রুটিপূর্ণ’। এই প্রকল্পের প্রস্তাবনা ভারতীয় বিজ্ঞানের বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি করবে। বিবৃতিতে লেখা হয়, কেন্দ্রের এই প্রকল্পে শুধু শুধু টাকা ঢালা হচ্ছে বলে আমাদের মনে হয়।
আরও জানতে ক্লিক করুন, গোবর, গোমূত্র থেকে ক্যান্সারের ওষুধ খুঁজতে বিপুল বরাদ্দ কেন্দ্রের
কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, অ্যাজমা, আর্থারাইটিস, ক্যানসারের মতো অসুখ সারানোর ব্যাপারে গোমূত্র, দুধ এগুলির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা হোক। এই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, যে প্রাচীন বইতে গোমূত্র ও গোবরকে বিভিন্ন অসুখের প্রতিষেধক বলা দাবি করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশ লেখকরই কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি। সেই লেখকরা কোনও উল্লেখযোগ্য চিকিৎসক ছিলেন কি না সেটাও সন্দেহ।
মুম্বইয়ের হোমি ভাবা সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশনের পদার্থবিজ্ঞানী অনিকেত সুলে, কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের গবেষক সৌমিত্র ব্যানার্জির উদ্যোগে প্রথমে এই বিবৃতি লেখা হয়। ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, পুণের ন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি, মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, যাদবপুর, কলকাতা, মাইশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানের ১১০ জন বিজ্ঞানী ও গবেষক তাতে সহমত জানিয়ে সই করেন। তাঁদের দাবি, শীঘ্রই এই প্রকল্প প্রত্যাহার করতে হবে কেন্দ্রকে। পাশাপাশি ভারতীয় গরুদের যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে তারও বিরোধিতা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেশের অন্যান্য গবেষক ও বিজ্ঞানীদেরও প্রতিবাদে সামিল হতে আহ্ববান জানান। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান দিবসে আমজনতাকে জানানো হোক, গোমূত্র, গোবর থেকে কোনও কিছু উৎপাদনের ভাবনাই অযৌক্তিক।
Comments are closed.