Social Distancing: সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, আখেরে লাভ হবে, বলছেন চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরা

করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত বিশ্ব। এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে জনসাধারণকে সামাজিক মেলামেশা যথাসাধ্য কমানো বা social distance মেনে চলার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে সব দেশের সরকার, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরা। কোভিড-১৯ (Covid-19) এর আতঙ্কে সেই সামাজিক মেলামেশা যথাসাধ্য কমাতে বা social distancing বজায় রাখতেই দেশে দেশে জারি হয়েছে লকডাউন।

 

Social Distance – কী এবং কেন?

 

what is social distance

 

সামাজিক মেলামেশা যথাসাধ্য কমানো বা সামাজিক দূরত্ব যথাসাধ্য বাড়ানোর পারিভাষিক নাম হল Social Distancing. করোনা রুখতে এই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং- এর জন্যই স্কুল-কলেজ, অফিস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্মীদের অফিস ওয়ার্ক করতে বলা হয়েছে বাড়ি থেকে। মোট কথা সব পরিসরে জনসমাগম যত দূর সম্ভব কমানোর যে আয়োজন তাই হল সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং।

 

করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে ভারতে Social Distancing

একে তো ভারতে জন ঘনত্ব অনেক বেশি। তার উপর রয়েছে প্রচুর বস্তি, ঝুপড়ি। এর জন্য বিপদ এড়াতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। তাতে হয়ত কষ্ট হবে। তবে সেটা সাময়িক। এই কষ্ট মেনে সকলের পরামর্শমতো ওই দূরত্ব (social distance scale) বজায় রাখতে পারলে সংক্রমণ কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

দিন দিন যে ভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে ভারতে social distance বজায় রাখা এবং সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে তা পালনের প্রয়োজন খুব বেশি। এই কারণেই কোনও কোনও রাজ্যে ১৪৪ ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে। তারই সূত্র ধরে এখন সারা দেশে লকডাউন চলছে। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানার জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা, এই ২১ দিন লকডাউন না মেনে চললে ভারতকে ২১ বছর পিছিয়ে যেতে হবে।

 

Social Distancing – কী করবেন, কী করবেন না

 

Social distancing একটি সহজ কনসেপ্ট, কয়েকটি জিনিস মেনে চললে করোনার মতো ছোঁয়াচে ভাইরাসের কোপ থেকে বাঁচা যায়।

কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে যে জিনিসগুলি মেনে চলতে বলা হচ্ছে, তা হল –

১) খুব দরকার ছাড়া বাইরের মানুষজনের সংস্পর্শে না আসা। বাজার করা, ওষুধ কেনার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজগুলি করার সময়ও যাতে সচেতন হয়ে ভিড় এড়ানো যায়।

২) বাড়ি ছেড়ে যত কম সময় বাইরে কাটানো যায় তত ভালো। সপ্তাহের বাজার যদি একবারে করে নেওয়া যায় খুব ভালো হয়।

৩) বাইরে বেরলে মোটামুটি দু’মিটার দূরত্ব থেকে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলা।

৪) কোনও ভিড়, ঠাসাঠাসি একেবারে এড়িয়ে চলা, অনুষ্ঠান হোক বা বাজার কোথাও যেন ভিড়ের মধ্যে না পড়েন। মোট কথা, যেনতেন ভাবে ভিড় বর্জন করতে হবে।

 

সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চললে কী উপকার (Effects of Social Distancing)

 

social distance effect

 

Social distancing -এর এই কটা ধাপ যদি সবাই মেনে চলেন, কয়েক দিনের মধ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমে যাবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা একেবারেই নেমে যাবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

 

সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানা, না মানা এবং বিতর্ক

 

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, লকডাইন করে social distancing করার এত কড়াকড়ি কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের জনসংখ্যা এবং সংক্রমণের অনুপাত ধরে এখনই যদি এই অবাধ সামাজিক মেলামেশায় কোপ না পড়ে, তা হলে করোনা সংক্রমণ বহু গুণ বেড়ে যেতে পারে। তাই করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এই চূড়ান্ত সতর্কতা বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। যাতে বাধ্য হয়ে জনজীবন অচল করতে না হয়, সেই কারণেই জনসমাগম ও সামাজিক মেলামেশা যথাসম্ভব কমানো জরুরি।

ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে করোনা সংক্রমণ হাতের বাইরে চলে গেলে সমূহ বিপদ। দেশের হাসপাতালগুলির সীমিত শয্যা ব্যবস্থার মধ্যে যদি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তা হলে তাঁদের আইসোলেশনে রাখতে গেলে অন্যান্য রোগীরা প্রবল সমস্যায় পড়বেন।উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা ‘ওভারলোডেড’ নয়, সেখানে করোনায় আক্রান্তের মৃত্যু হার এক শতাংশের নীচে। কিন্তু ইতালির মতো দেশে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সংক্রামিত রোগীর চাপে মৃত্যু হার এখন প্রায় ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই কারণেই social distance মেনে চলা ভীষণ জরুরি। তাই ভিন দেশ থেকে আসা কোনও (বিশেষতঃ করোনা প্রভাবিত দেশ) ব্যক্তিকে অন্তত চোদ্দ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকা, অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, সাধারণ মানুষ কোনও জটলায় যাতে না যান, তার জন্য যে নিয়ম মেনে চলতে বলা হচ্ছে এক কথায় সেটাই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং।

Comments are closed.