শূন্য থেকে শুরু করে নিজেরাই তৈরি করেছিলেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সংস্থা! আসুন দেখেই নেই তাদের কঠিন সাফল্য
যত সময় গেছে প্রযুক্তি ততই আমাদের জীবনকে করে তুলেছে সহজ থেকে সহজতর। ঘরে বসেই এখন হাতের মুঠোয় পাওয়া যায় সারা পৃথিবীকে। প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে এমন হয়েছে যে সংস্থার উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন কারণে সেই সংস্থা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে।
কখনো তাদের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়েছে কোম্পানির ম্যানেজিং বোর্ড, আবার কখনো সেই সব উদ্যোক্তাদের ভুল সিদ্ধান্তে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে সেসব সংস্থা। এর ফলে এই সব কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টররা সংস্থার উদ্যোক্তাকেই কখনো কখনো বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ আমরা জানবো এমনই কিছু পৃথিবী ঘুরিয়ে দেওয়া উদ্যোক্তাদের কথা যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে তাদেরই প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।
স্টিভ জোবস : এই তালিকায় প্রথমেই যে নামটি আসে সেটি হল স্টিভ জোবস। স্টিভের বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যৎ দূরদর্শিতার কারণে অ্যাপেল পৌঁছাতে পেরেছিল এক অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু স্টিভ ছিলেন খুবই বদরাগি। প্রায়ই তার সাথে তার কোম্পানির ম্যানেজিং বোর্ডের অশান্তি হতো। তাই ১৯৮০ সালে অ্যাপেল কোম্পানির ম্যানেজিং বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় ,কখনোই স্টিভ জোবস এই গুরু দায়িত্ব সামলাতে পারবে না, কারণ তার বয়স কম ও বদমেজাজি। তাই স্টিভের পরিবর্তে তৎকালীন পেপসি সংস্থার কার্যনির্বাহী জন স্কালিকে সিইও পদে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে কিছু মতানৈক্যের কারণে স্টিভ আবার ফিরে আসেন অ্যাপেলে।
ট্রাভিস কালানিক : ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যাপ ক্যাব সংস্থা উবের। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে উবের সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হচ্ছিল।কখনও যাত্রীরা গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, কখনও বা চুরির অভিযোগ। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১৭ সালে উবেরের ম্যানেজিং বোর্ড ট্রাভিস কালানিককে পদ ছাড়ার আবেদন জানান। এরপর ধীরে ধীরে পুরনো জমি ফিরে পায় উবের।
জ্যাক ডর্সি : সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটার প্রতিষ্ঠা করেন ইভান উইলিয়ামস, নোয়া গ্লাস, জ্যাক ডর্সি এবং বিজ স্টোন।জ্যাক ডর্সি নিজেই ২০০৬ সাল নাগাদ কর্মরত ছিলেন টুইটারের সিইও পদে। কিন্তু টুইটারের সিইও থাকাকালীন তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ২০০৮ সাল নাগাদ তাকে সিইও পদ থেকে বিতাড়িত করা হয়। এই ঘটনার সাত বছর পর অবশ্য তিনি পুনরায় সংস্থায় ফিরে আসেন।
মার্ক এবেরহার্ড : টেসলা ও ইলন মাস্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। কিন্তু টেসলা সংস্থার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মার্ক এবেরহার্ড। ২০০৭ সাল নাগাদ ইলন মাস্ক তাকেই সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেন।এই বিষয় অবশ্য সঠিক কোনো ধারণা পাওয়া যায় নি।
ডেভিড নেলম্যান :১৯৯৯ সালে ডেভিড নেলম্যানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় বিমান সংস্থা জেটব্লু। কিন্তু তার একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তিনি সিইও পদ থেকে বহিষ্কৃত হন।২০০৭ সালের এক সময় আমেরিকার পূর্ব উপকূলে ঝড়ের সম্ভাবনার আগাম ঘোষণা করা হয়। নিউইয়র্ক বিমানবন্দর থেকে সমস্ত বিমান বাতিল করা হলেও জারি থাকে জেটব্লু সংস্থার বিমান। এর ফলে প্রবল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের অকারনে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার কারণে সংস্থা সিইও পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় ডেভিড নেলম্যানকে।
জর্জ জিমার : মেন্স ওয়্যার হাউজ হলো পুরুষদের যাবতীয় পোশাকের এক অদ্বিতীয় ঠিকানা। ২০১৩ সালে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জর্জ জিমার নিজেই সিইও পদ থেকে সরে যান। তার অভিযোগ ছিল, সংস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বোর্ড সদস্যদের সতর্ক করতে চাইছিলেন তিনি, কিন্তু বোর্ডের সদস্যরা তার কথা শুনছেন না।
একটি সংস্থা তখনই সাফল্যের মুখ দেখে যখন সংস্থার উন্নতির জন্য তাদের ম্যানেজিং বোর্ড নিজেদের প্রতিষ্ঠাতাকেও সরিয়ে দিতে পিছপা হন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত ভুল হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এসব সিদ্ধান্ত সংস্থাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
Comments are closed.