আমার বয়েস হয়েছে, অবসর নিতে হলে খুশিই হব, পড়াশোনা-লেখালেখি করবঃ সূর্যকান্ত মিশ্র, দলে জল্পনা

লোকসভা ভোটে চূড়ান্ত বিপর্যয়, সংগঠনের নড়বড়ে অবস্থা, দলের মধ্যেই তীব্র সমালোচনা, সব মিলে কি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ভাবনা সূর্যকান্ত মিশ্রর মাথায়?
লোকসভা ভোটের পর ৪ জুন, মঙ্গলবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের প্রথম রাজ্য কমিটির মিটিং বসে। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। সারাদিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা এবং আত্মসমালোচনা উঠে আসে অনেক নেতারই কথায়। পাশাপাশি, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রসঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিমান বসুকে নিশানা করে তাঁদের সমালোচনা করা হয়। প্রশ্ন ওঠে, আসন সমঝোতা পর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনায় কেন সূর্যকান্ত মিশ্র বা বিমান বসু নিজেরা হস্তক্ষেপ করেননি? কেন আলোচনায় অংশ না নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন? যে দু’জন নেতার ওপর কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব ছাড়া হয়েছিল তাঁরা কি পলিটব্যুরো সদস্যের ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন? প্রসঙ্গত, আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট রবীন দেব এবং মৃদুল দে’কে দায়িত্ব দিয়েছিল। মঙ্গলবারের রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার জন্য এই দুই নেতার দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য। এর পাশাপাশি, প্রার্থী বাছাই থেকে রাজনৈতিক লাইন, আন্দোলন কর্মসূচি, সংগঠন নানা বিষয়েই সমালোচনার মুখে পড়েন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, আসন সমঝোতা যদি ভেঙেই গেল তবে ৪২ টি কেন্দ্রেই কেন প্রার্থী দেওয়া হল না?
সব শেষ প্রথা মাফিক মিটিংয়ের জবাবি ভাষণ দিতে ওঠেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সাংগঠনিক ব্যর্থতা, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিজেপির ভোট বাক্সে চলে যাওয়া, বিজেপিকে মূল বিপদ চিহ্নিত করার কথা বলতে বলতেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ২০১৬ বিধানসভার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে আমাদের কথা তুলে ধরা হয়েছিল, এবার তা হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। পার্টি সদস্য নন এমন অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করছেন, তা নিয়ে কিছু করার নেই। কিন্তু অনেক পার্টি সদস্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু লিখছেন, যা ঠিক নয়। প্রসঙ্গত, নির্বাচন চলাকালীন হাতের ‘মধ্যমা’ ব্যবহার করে সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়।
এরপরই আচমকা নিজের প্রসঙ্গে চলে আসেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বলেন, আমার তো বয়েস হয়েছে। আমার যদি অবসর নেওয়ার কথা ওঠে, আমি খুশিই হব। পড়াশোনা করব, লেখালেখি করব। গ্রামের বাড়িতে যাব, পার্টির কাজ করব। কিন্তু দলে এখনও অনেকে আছেন, যাঁদের মানুষ পছন্দ করছেন না। আবার দলের বাইরে অনেকে আছেন যাঁরা এলে ভালো হোত, কিন্তু তাঁরা দলে আসছেন না।
২০১৫ সালে কলকাতায় রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। কঠিন সময়ে দলের হাল ধরার পর সূর্যকান্ত মিশ্র ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার ব্যাপারে। শুধু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, বর্ধমান, কলকাতা, হাওড়ার মতো জেলা বা দলের অন্দরের তীব্র বিরোধিতাই নয়, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোতেও তীব্র বাধার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সব বাধা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টিকে প্রায় ব্যক্তিগত জেদের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এবার সেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তিনি যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি, এই অভিযোগ ওঠার পর তাঁর মুখে ‘অবসরে’র কথা শুনে চমকে উঠেছেন রাজ্য কমিটির অনেক নেতাই।

Comments are closed.