তিন মাস সাসপেন্ড! ‘বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ’ বলেও সুশান্ত ঘোষের জনপ্রিয়তায় পিছু হঠলেন সূর্য মিশ্র, জেলা পার্টির সুপারিশ কেন খারিজ?
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, তার চেয়েও বড়ো কথা, সিপিএমের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা সুশান্ত ঘোষের জনভিত্তির কাছে পিছু হঠতে বাধ্য হল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। শুধু তাই নয়, কয়েক বছর ধরেই দল এবং নিজের এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও সুশান্ত ঘোষের বহিষ্কার চেয়েও সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন পেল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পার্টি। যা অবশ্যই ওই জেলার পার্টি সম্পাদক তরুণ রায়ের কাছে বড়ো ধাক্কা।
যেখানে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নিজে বলেছিলেন, সুশান্ত ঘোষ যা করেছেন তা ‘বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ’, তারপরও তাঁকে দল থেকে মাত্র তিন মাসের সাসপেন্ড করেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সুশান্ত ঘোষকে নিয়ে সিপিএমের অন্দরে বিতর্কের সূত্রপাত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে। The Bengal Story তে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় সুশান্ত ঘোষের ডায়েরি। টানা ১৮ পর্বে সুশান্ত ঘোষ কখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কখনও মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুর নানা ভূমিকার সমালোচনা করেন। লেখেন নন্দীগ্রাম, নেতাই কাণ্ডের নানা অলিখিত ঘটনা, যা নিয়ে দলের অন্দরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
পড়ুন: সুশান্ত ঘোষের ডায়েরি #১ বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়, একথা আজ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব?
২০১৯ সালের জুলাই মাসের শেষে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসেছিল সিপিএমের রাজ্য কমিটির মিটিং। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতা তাপস সিংহ সহ কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন, সুশান্ত ঘোষ যা লিখেছেন, তা কি দল অনুমোদন করে? জবাবে সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, সুশান্ত ঘোষ যা লিখেছেন, তা ‘বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ’। এরপর সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর পার্টিকে নির্দেশ দেন তিনি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সিপিএম সম্পাদক তরুণ রায় প্রথমে সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ ও পরে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। তদন্তের পর সুশান্ত ঘোষকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন তরুণ রায়। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের সম্পাদকের এই সুপারিশ না মেনে এরপর রামচন্দ্র ডোম এবং আভাস রায়চৌধুরীর একটি দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
গত শুক্রবার ৪ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়। জানা গিয়েছে, সুশান্ত ঘোষকে বহিষ্কার করার যে সুপারিশ পশ্চিম মেদিনীপুর পার্টি করেছিল, তাকে খারিজ করে সিপিএমের এই জনপ্রিয় নেতাকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।
মিটিংয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র ফের বলেন, সুশান্ত ঘোষ যা করেছেন, তা বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমরা দলের কাউকে হারাতে চাই না। তাঁকে ডাকা হয়েছিল। তিনি ভুল স্বীকার করেছেন এবং যে শাস্তি দেওয়া হবে তা মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন। তাই তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
দলের অনেক নেতাই বলছেন, এর আগে তুলনায় লঘু অপরাধ করেও বহিষ্কারের মুখে পড়েছেন রেজ্জাক মোল্লা, অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠ সহ বহু নেতা। কিন্তু এবার সুশান্ত ঘোষের জনপ্রিয়তার কাছে পিছু হঠতে বাধ্য হল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বিশেষ করে তাঁর মতো লড়াকু নেতাকে বহিষ্কার করলে কর্মীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে বলেই মনে করেন বহু সিপিএম নেতা।
সূত্রের খবর, সুশান্ত ঘোষকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলী নিয়েছিল। কিন্তু তা সর্বোচ্চ কমিটি, অর্থাৎ জেলা কমিটিতে অনুমোদন করানো হয়নি। পার্টির মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, সুশান্ত ঘোষের মতো নেতার বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত কেন জেলা কমিটির মিটিংয়ে অনুমোদন করাতে পারলেন না তরুণ রায়? তবে কি জেলাতেও এই ইস্যুতে সংখ্যালঘু তরুণ রায় গোষ্ঠী? সিপিএমের একাধিক নেতা বলছেন, আপাতত এই পর্বের এখানেই ইতি, সুশান্ত যা লিখেছেন তাতে তাঁকে কিছু শাস্তি দিতেই হোত। কিন্তু জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে তাঁকে বহিষ্কার করা আলিমুদ্দিনের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
Comments are closed.