সৌগতর সঙ্গে আলোচনা, কল্যাণের সঙ্গে সংঘাত! কোন পথে শুভেন্দু-তৃণমূল সম্পর্ক?

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কোন পথে তা নিয়ে চূড়ান্ত টালবাহানা দলের অন্দরে। শুভেন্দু কি সত্যি সত্যিই দল ছাড়বেন, গত কয়েক মাস ধরে একাধিকবার এই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। নন্দীগ্রাম শহিদ দিবসে শুভেন্দুর অরাজনৈতিক সভায় ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা থেকে সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়। আবার এর মধ্যে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন দলের সাংসদ সৌগত রায়। সেখানে শুভেন্দু দলের প্রতি তাঁর কিছু বক্তব্য পেশ করেছেন। যা নিয়ে আগামী সোমবার ফের দু’জনের আলোচনায় বসার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই তৃণমূলের আর এক সাংসদ ও শীর্ষ নেতা কল্যাণ ব্যানার্জির সঙ্গে শুভেন্দুর বেনজির সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে শুভেন্দুর সঙ্গে সমঝোতার আশা ক্ষীণ হচ্ছে বলেই মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।

গয় ১০ নভেম্বর ‘নন্দীগ্রাম দিবস’এ শুভেন্দুর সভার পর কল্যাণ একটি দলীয় সভায় নাম না করে শুভেন্দুর পরিবারকে নিশানা করে বলেছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামের গাছের তলায় বড় হয়েছিস। চারটে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিস। চারখানা চেয়ারে আছিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিতে আলু বেচতিস রে! আলু বেচতিস!’ কিন্তু একদিন আগে রামনগরে শুভেন্দুর বক্তব্যের পর আবার নরম সুর শোনা যায় কল্যাণের গলায়। তিনি জানান, শিশির অধিকারীকে শ্রদ্ধা করেন। শুভেন্দু তাঁর ছোটভাইয়ের মতো।

কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আবার শুবেন্দুর বিরুদ্ধে আবার আক্রমণাত্মক হয়েছেন কল্যাণ। কারণ, শুক্রবার কল্যাণের গড় হুগলিতে সভা করতে গিয়ে শুভেন্দু আবার নাম না করে কল্যাণকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত অনিল বসু যখন কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, তখন হুগলি জেলার মানুষ সেটা মেনে নেননি। আজ কোনও জনপ্রতিনিধি আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে, আপনারা কি মেনে নেবেন? আপনারা কি এই কালচার সমর্থন করেন? এদিকে এর উত্তর দিতে দেরি করেননি কল্যাণও। সাড়ে ৩ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় শুভেন্দুর নাম না করে কল্যাণের কটাক্ষ, দলের সদস্য থাকব। মন্ত্রিসভায় থাকব, আবার অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করব, যে ব্যক্তি এ সমস্ত কাজ করে, তার কথার আমি কী উত্তর দেব!

শুধু তাই নয়, নন্দীগ্রাম দিবসের দিন শুভেন্দুর শরীরীভাষার কথা উল্লেখ করে কল্যাণ বলেন, ‘সেদিন কাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন? নাম বলেননি? কেন সাহস হয়নি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে?’ তিনি এও বলেন, নন্দীগ্রামের ঘটনায় যদি সিবিআই করিয়ে না নিয়ে আনতেন, ‘এসব বড় বড় নেতারা যারা খাটের তলায় ঢুকে গিয়েছিল,বেরিয়ে আসতে পারত না।

এখন রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে সাংসদ শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন এবং যে সাংসদের সঙ্গে তাঁর সংঘাত হচ্ছে, দুটোই শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন ক্রমেই হচ্ছে। অর্থাৎ, সমঝোতার দরজা খোলা রেখেও কি শুভেন্দু সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে তৃণমূল, এই প্রশ্নেই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।

Comments are closed.