মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের আক্রমণের লক্ষ্য এবার বাংলার নিউজ চ্যানেল এবিপি আনন্দ। এবিপি আনন্দ কেন একটি ধর্মীয় কর্মসূচিকে কুসংস্কার বলে অভিহিত করেছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি।
দিন কয়েক আগে কলকাতায় ময়দানে করোনা মাতার পুজো করেন কিছু মহিলা। কয়েকজন মহিলা ময়দানে পুজো করেছেন, অথচ সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানেননি, কিংবা কেউ মুখে মাস্ক পরেননি, তা নিয়ে সমালোচনা করে এবিপি আনন্দ।
এবার এই বিষয়ে এবিপি আনন্দকেই কটাক্ষ করলেন তথাগত রায়। তাঁর বক্তব্য, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় না রাখা কিংবা মাস্কহীন অবস্থায় ভিড় করে থাকা নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু এবিপি আনন্দ কেন কুসংস্কারের প্রশ্ন তুলছে?
সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ পরপর ট্যুইট করে এবিপি আনন্দকে অত্যন্ত প্রগতিশীল বলে কটাক্ষ করে নিজের মতের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে থাকেন তথাগত রায়।
একটি ট্যুইটে তিনি লেখেন, করোনা মাতায় আমারও বিশ্বাস নেই। কিন্তু ওই মহিলারা কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি না করে পুজো করছিলেন। এর মাধ্যমে ওঁরা নিজেদের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। মনের ডাক্তাররাও এই ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা যেন ভুলে না যাই, আমরা একটি ধর্মপ্রাণ দেশের বাসিন্দা। এই ট্যুইটেই তথাগত টেনে এনেছেন বিবেকানন্দকেও।
অতিমারি চলাকালীন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং না মেনে, মুখে মাস্ক না পরে পুজো করার বিষয়টি আসলে ধর্ম বিশ্বাসের প্রতিফলন, কুসংস্কারের নয়। এটাই তথাগত রায়ের পরপর ট্যুইটের বক্তব্য।
এই প্রসঙ্গেই তিনি একটি ঘটনারও উদাহরণ দিয়েছেন। ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, ১৯৯৯ সালে সুপার সাইক্লোন আসার খবর পেয়েই ওড়িশার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গিরিধর গোমাঙ্গো ছুটেছিলেন জ্যোতিষের কাছে। জ্যোতিষি বলেছিলেন, চিন্তা নেই সুপার সাইক্লোন বাংলা কিংবা অন্ধ্রের দিকে ঘুরে যাবে। আঁচ পড়বে না ওড়িশায়। জ্যোতিষের বরাভয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে নাকি মুখ্যমন্ত্রী গোমাঙ্গ বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর সাইক্লোন ওড়িশায় আছড়ে পড়ে। ফল হয় মারাত্মক। তথাগত রায়ের মতে, এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারপরই তিনি লেখেছেন, আমাদের বুঝে নিতে হবে কোনটা কুসংস্কার আর কোনটা ধর্মবিশ্বাস।
এবারই অবশ্য প্রথম নয়। মেঘালয়ের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসে বারবার বাংলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজের মত ব্যক্ত করেন তথাগত রায়। যা একাধিকবার ব্যক্তিগতের গণ্ডি পেরিয়ে বড়সড় বিতর্কের আকার নিয়েছে। তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে কখনও অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রদায়িক উসকানিরও। কখনও জয় বাংলা স্লোগানের বিরোধিতা করে মমতা ব্যানার্জিকে আক্রমণ, আবার কখনও অভিজিৎ বিনায়কের নাম নিয়ে অভিযোগ। তথাগতর আক্রমণ থেকে বাদ যাননি সিপিএম নেতা প্রয়াত জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্ত থেকে আজকের সুজন চক্রবর্তীরাও। আনন্দবাজার পত্রিকা কিংবা এবিপি আনন্দের উদ্দেশেও বিভিন্ন সময় বক্রোক্তি ভেসে এসেছে শিলংয়ের রাজভবন থেকে। এবার অতিমারি চলাকালীন প্রকাশ্য কলকাতা ময়দানে করোনা মাতার পুজো করা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক। রাজ্যপাল তথাগত রায় ফের সোচ্চার।
Comments are closed.