মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের বিতর্কিত ট্যুইট ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়। মঙ্গলবার বিকেলে হিন্দি ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বেশ কয়েকটি ট্যুইট করেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। সেই ট্যুইটের বয়ান নিয়েই তৈরি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। চারদিকে তথাগত রায়ের ট্যুইটের ভাষা চয়ণ নিয়ে নিন্দার ঝড়।
মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় লিখেছেন, ‘এখন বাঙালির ছেলেরা হরিয়ানা থেকে কেরালা পর্যন্ত সব জায়গায় ঘর ঝাঁট দেয়, বাঙালি মেয়েরা মুম্বইতে বার-ডান্স করে, যা আগে অকল্পনীয় ছিল।’ ট্যুইটে এই ভাষার ব্যবহার নিয়েই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড়। এখানেই অবশ্য থামেননি তথাগত রায়। হিন্দি না শিখলে পস্তাতে হবে, বলেও কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল। হিন্দির প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে বাঙালিদের নিয়ে কীভাবে তথাগত রায় এমন কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারেন, হতবাক নেটিজেনরা।
বিজেপির হয়ে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কলকাতা থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যাওয়া তথাগত রায়ের ট্যুইট নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও কখনও কাশ্মীরিদের নিয়ে আবার কখনও ত্রিপুরায় লেনিন মূর্তি ভাঙা নিয়ে তাঁর ট্যুইট বিতর্কের রসদ যুগিয়েছে। এবার হিন্দি শিক্ষা বিষয়ে মুখ খুলেই ফের শিরোনামে তথাগত রায়।
হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান, এই মন্ত্রেই দেশ গড়ার লক্ষ্য সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপির। হিন্দি ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বারবার সওয়ালও করেছে এই দুই সংগঠন। গোটা দেশে এক ভাষার ব্যবহারই বিজেপি-আরএসএসের আসল লক্ষ্য বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। এজন্যই তারা সারাদেশের পড়ুয়াদের উপর হিন্দি চাপিয়ে দিতে চায়। আর সঙ্ঘ পরিবারের এই প্রবল হিন্দি আগ্রাসনের মুখে পড়ে হারিয়ে যাবে অন্যান্য আঞ্চলিক তথা প্রধান ভাষা। এটাই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মূল লক্ষ্য বলে দাবি বিরোধীদের। এই প্রেক্ষিতে হিন্দি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্কিত ট্যুইট এল সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের। সমালোচকদের একাংশের বক্তব্য, হিন্দির ওকালতি করতে গিয়ে তথাগত ভাষার ব্যবহারবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই বাঙালি নারী-পুরুষ সম্পর্কে কুরুচিকর উদাহরণ দিতেও বাঁধেনি মেঘালয়ের রাজ্যপালের। সব মিলিয়ে হিন্দির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ট্যুইট করলেও এই মুহূর্তে বাঙালিদের নিয়ে কুরুচিকর ভাষা ব্যবহার করা নিয়ে অসন্তুষ্ট বাঙালিরাই। তথাগত রায় অবশ্য নিজের মতো করে এই ভাষা ব্যবহারের নেপথ্য যুক্তি সাজিয়েছেন। তাঁর দাবি, বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা এমনই যে সেখানে কাজের সংস্থান হয় না। চাকরি মেলে না। তাই বাধ্য হয়ে বাঙালির তরুণ-তরুণীকে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে হয় এবং বিভিন্ন কাজ করে পেট চালাতে হয়।
Comments are closed.