ভয়াবহ রূপ নিয়েছে কেরলের বন্যা পরিস্থিতি, মৃত অন্তত ১৬৭। পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রশাসন জানাচ্ছে, ১৯২৩ সালের পর স্মরণাতীত কালে এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি কেরল। গত ১০০ বছরে বর্ষার এমন বাঁধভাঙা ভয়ঙ্কর রূপও দেখা যায়নি। শুক্রবার কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬৭। তার মধ্যে গত ৩৬ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের। রাজ্যের ১৪ টির মধ্যে ১৩ টি জেলাই বন্যার কবলে। জলের তলায় চলে গেছে শহর, গ্রাম, মফঃস্বলের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। যেদিকেই চোখ যায় শুধু জল আর জল। কোথাও তা কোমর সমান, কোথাও তা একতলা বাড়ির প্রায় ছাদ ছুঁয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি, দু’কূল ছাপানো নদীর জল, বাঁধ থেকে ছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টির জল, ভূমি ধস-সবে মিলে কার্যত লণ্ডভণ্ড দশা দক্ষিণের এই রাজ্যটির। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তার আগাম কোনও ধারণাই করতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। পরিস্থিতি এতটাই জটিল ও নজিরবিহীন যে, রাজ্যের একার পক্ষে তা সামাল দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কেন্দ্রের তরফে তাঁকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
কেরলের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। শুক্রবার বিকালের পর পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখতে কেরলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেরলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের তরফে ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সংশ্লিষ্ট সাব-কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মূল্যাপেরিয়ার বাঁধের জলস্তরকে ১৩৯ ফুটের নীচে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য। কারণ স্থানীয়দের আশঙ্কা, ওই বাঁধের জলস্তর আর কয়েক ফুট বাড়লেই ভেসে যেতে পারে বাঁধ সংলগ্ন সমস্ত এলাকা।
রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের সঙ্গে উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে সেনা, আধা-সেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনা, কোস্ট গার্ড, জাতীয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের। যে সব জায়গায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, সেখানে এয়ারলিফ্ট করে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হচ্ছে। নামানো হয়েছে নৌকা, স্পিড বোট। এই মুহূর্তে রাজ্যজুড়ে বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে কাজ করছে সেনার প্রায় ২০০ টি উদ্ধারকারী জলযান। কোস্ট গার্ডের তরফে অতিরিক্ত চারটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ও তিনটি উদ্ধারকারী জাহাজ কেরলে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই কেরল পরিস্থিতি নিয়ে নয়া দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতর ও উদ্ধারকারী দলগুলির কর্তাদের সঙ্গে আপৎকালীন বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব। উদ্ধার অভিযানে যোগ দেওয়া সবকটি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লোকবল আরও বাড়ানোর। সেই মতো জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আরও ৩৫ টি টিম কেরলে পাঠানো হয়েছে। মেট্রো লাইনে জল জমে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে কোচি মেট্রো পরিষেবা। ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ ট্রেন পরিষেবা। রাস্তাঘাট জলের তলায়, তাই বন্ধ যান চলাচলও। রাজ্যের সবকটি জেলায় প্রশাসনের তরফে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই কেরল সরকার ঘোষণা করেছে, রাজ্যে এবছর ওনাম উৎসব পালন করা হবে না। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা জলস্তর আরও বাড়তে পারে বৃষ্টির জেরে। শুক্রবার তাই রাজ্যের ১৩ টি জেলাতেই প্রশাসনের তরফে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। গত ৮ ই অগাস্ট থেকে চেষ্টা চলছে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌছে দেওয়ার। রাজ্যের তরফে সকলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যতটা সম্ভব সাহায্য পাঠানোর। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার তরফে কেরলে আগামী সাত দিন বিণামূল্যে কল ও নেট পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

Comments are closed.