ট্রেন লেট বা সময়ের আগে স্টেশনে পৌঁছলে রেলকে জরিমানা দেবে বেসরকারি সংস্থা, নিলামের আগে শর্ত দিল রেলওয়ে

বেসরকারি ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ শতাংশ সময় পর্যন্ত লেট বরদাস্ত করবে সরকার। তার বেশি লেট করলে দিতে হবে জরিমানা। সময়ের আগে হোক বা পরে, সময় মেনে প্রাইভেট ট্রেন গন্তব্যে না পৌঁছোলে রেলকে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা। নিলাম প্রক্রিয়া শুরুর আগে ইচ্ছুক প্রাইভেট কোম্পানিগুলির জন্য এমনই সব শর্ত দিচ্ছে ভারতীয় রেল। বুধবার প্রকাশ্যে এসেছে রেলের এই ‘ড্রাফট কনসেশন এগ্রিমেন্ট’। সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার উপর।

বেসরকারি সংস্থার পরিচালনায় চলা ট্রেন আগে বা পরে স্টেশনে পৌঁছোলে রেলওয়ের কাছে বড় অঙ্কের মাশুল দিতে হবে। এই জরিমানা এড়াতে বছরে ৯৫ শতাংশ সময়ানুবর্তিতা মেনে চলতে হবে প্রাইভেট কোম্পানিকে।

প্রাইভেট কোম্পানির হাতে ট্রেন তুলে দিলেও যেহেতু সরকারের সঙ্গে উপার্জন ভাগ করে নেওয়ার একটা ব্যবস্থা রাখা হবে, তাই রেলওয়ের তরফে বেসরকারী সংস্থাগুলির অফিসে থাকবেন প্রতিনিধি। জানা যাচ্ছে, ওই বেসরকারি সংস্থা তাদের উপার্জনের তথ্য যাতে ‘সত্যনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্তভাবে’ দেয় তাই এই নিয়ম। যদি দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা তাদের আয় যা দেখিয়েছে প্রকৃত আয় তার এক শতাংশ বেশি ছিল, সেক্ষেত্রে ওই পার্থক্যের ১০ গুণ অর্থ রেলকে জরিমানা হিসেবে দেবে সংশ্লিষ্ট প্রাইভেট কোম্পানি। আবার বছরে অন্তত ৯৫ শতাংশ সময়ানুবর্তীতা মেনে ট্রেন চালাতে না পারলেও রেলের কাছে জরিমানা গুনতে হবে। তারপর থেকে প্রতি ১ শতাংশ হ্রাসের জন্য বেসরকারী অপারেটরগুলি ট্রেন পরিবহণের ২০০ কিলোমিটারের সমান জরিমানা রেলকে দেবে।

সমস্ত প্রাইভেট ট্রেনের জন্য এই মাশুল চার্জ প্রতি কিলোমিটারে ৫১২ টাকা। রেলের পরিকাঠামো ব্যবহার করা এবং ফিজিক্যাল ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবহারের জন্য এই অর্থ ভারতীয় রেলওয়েকে দিতে হবে সময় মেনে ট্রেন চালাতে না পারা বেসরকারি সংস্থাকে।

আবার গন্তব্যে কমপক্ষে ১০ মিনিট আগে যদি ট্রেন পৌঁছে যায়, সেজন্যও রেলকে জরিমানা দেবে প্রাইভেট সংস্থা। সেখানে নেওয়া হবে ১০ কিলোমিটার রাস্তার সমান অতিরিক্ত মাশুল।

একইভাবে রেলওয়ের কারণে যদি কোনও প্রাইভেট ট্রেন বছরে এক শতাংশ সময়ানুবর্তীতা মানতে না পারে, তবে ওই প্রাইভেট সংস্থাকে ৫০ কিলোমিটার বহনযোগ্য চার্জের সমান ক্ষতিপূরণ দেবে রেলওয়ে।

ট্রেন পরিষেবা বাতিল হলেও প্রাইভেট কোম্পানি সেই যাত্রার মোট আয়ের এক চতুর্থাংশের সমান মাশুল রেলওয়েকে প্রদান করবে। আর এমন পরিষেবা বাতিলের পরিমাণ যদি এক বছরে এক মাসের বেশি হয়, তবে রেলওয়েকে ওই যাত্রার সম্পূর্ণ খরচ প্রদান করবে প্রাইভেট কোম্পানি।

কিন্তু ভুল যদি রেল কর্তৃপক্ষের হয়?

রেলের ভুলে যদি ট্রেন পরিষেবা বাতিল করতে বাধ্য হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাইভেট কোম্পানি, সেক্ষেত্রে সেই সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দেবে রেল।

তবে মানুষ বা গবাদি ট্রেনে কাটা পড়লে, আন্দোলন বা অবরোধের কারণে কিংবা খারাপ আবহাওয়ায় কারণে যদি ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে বেসরকারী সংস্থাকে কোনও অর্থ প্রদান করতে হবে না।

ট্রেনের বেসরকারিকরণের জন্য নিলাম প্রক্রিয়ার সময়সীমা ৮ সেপ্টেম্বর। আরও সাতটি সংস্থা নিলামে অংশ নিতে চাওয়ায় এখন বরাত পাওয়ার দৌড়ে থাকা সংস্থার সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩ এ। এই তালিকার বড় কর্পোরেট নামগুলির মধ্যে আছে এল অ্যান্ড টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, সিমেন্স লিমিটেড। এছাড়া বোম্বার্ডিয়ার, অ্যালস্টম, টিটাগড় ওয়াগনস, সিএএফ ইন্ডিয়া, গেটওয়ে রেল, বেদান্ত গ্রুপের স্টেরলাইট পাওয়ার, BHEL, BEML, IRCTC-র মতো সংস্থাও রয়েছে এই দৌড়ে।

Comments are closed.