জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ারের হারানো জমি উদ্ধারে বড়ো চমক দিল তৃণমূল, যার জেরে তরাই-ডুয়ার্সে রাজ্যের শাসক দলের ব্যাপক শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা। সোমবার তৃণমূলে যোগ দিলেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ লাকরা। এদিন তৃণমূল ভবনে রাজ্যের শ্রম ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জি রাজেশ লাকরার হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন। উত্তরবঙ্গে তরাই-ডুয়ার্সে ব্যাপক প্রভাব ভারতীয় মূলনিবাসী আদিবাসী বিকাশ পরিষদের। এই সংগঠনের প্রাণপুরুষ রাজেশ। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতিও। ডাকাবুকো স্বভাবের জন্য এলাকায় তাঁকে টাইগার নামে ডাকা হয়।
ছাত্রাবস্থায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাজেশ। তারপর সিটুতে কাজ শুরু করেন। চা বাগানে শ্রমিক আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারির নেতা টাইগার প্রথম প্রচারে আসেন ২০০৮-০৯ সাল নাগাদ। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড় ছাড়িয়ে আন্দোলনের আঁচ এসে পৌঁছয় তরাই-ডুয়ার্সে। বিমল গুরুংরা দাবি করেন, তরাই-ডুয়ার্স গোর্খাল্যান্ডের অংশ। আগুন জ্বলে ওঠে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায়।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই শুরু হয় স্থানীয় আদিবাসীদের। সেই সময় আদিবাসীদের হয়ে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতা রাজেশ লাকরা। বাংলা ভাগ রুখতে বদ্ধপরিকর আদিবাসীদের এক ছাতার তোলায় এনে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করেন টাইগার। তরাই-ডুয়ার্সের দাবি থেকে মোর্চা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
তারপর থেকে যখনই রাজ্য ভাগের দাবি উঠেছে টাইগারের নেতৃত্বে শক্তিশালী গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছে তরাই-ডুয়ার্সে। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির চা বাগান এলাকায় রাজেশ লাকরার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এবার সেই জনপ্রিয়তার ফসল ঘরে তুলতে চলেছে তৃণমূল।
নয়ের দশকের শুরু থেকে বাম ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি রাজেশ লাকরার। প্রথমে এসএফআই তারপর সিটুর হয়ে কাজ করেছেন। সেই সূত্রেই পরিচয় রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জির সঙ্গে। ২০০৬ সালে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রথম সারির নেতা হিসেবে উঠে আসনে রাজেশ। পরবর্তীতে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ছেড়ে তৈরি করেন ভারতীয় মূলনিবাসী আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। সোমবার তা মিশে গেল তৃণমূলের সঙ্গে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজেশ লাকরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তরাই-ডুয়ার্সে শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে পারবে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে এই এলাকার সবকটি আসনেই বিপুল ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। কিন্তু টাইগারের যোগদানের জেরে এই সমীকরণে বিরাট বদল আসবে বলে আশাবাদী তৃণমূল। কুমারগ্রামের লুইস কুজুরও কিছুদিন আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এবার এলেন টাইগার।
তৃণমূলের তরফে আলিপুরদুয়ারের দায়িত্বে আছেন ঋতব্রত ব্যানার্জি। এসএফআইয়ের পুরনো যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ঋতব্রতই রাজেশ লাকরাকে তৃণমূলে আনলেন বলে খবর। টাইগারের অন্তর্ভুক্তিতে তরাই-ডুয়ার্সে দলের শক্তি বৃদ্ধি হবে বলে আশাবাদী তৃণমূল। যা আগামী বিধানসভার আগে স্বস্তি দিচ্ছে শীর্ষ নেতাদের।
Comments are closed.