সিনেমার শ্যুটিংয়ের সময় প্রত্যেক কলাকুশলীকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে ট্রিপল-লেয়ার মেডিক্যাল মাস্ক এবং গ্লাভস। হাত মেলানো, আলিঙ্গন, চুমু চলবে না। শ্যুটিং সেটে, স্টুডিও এবং অফিসে সিগারেট ভাগ করে টানা যাবে না। কলাকুশলীর মধ্যে অন্তত ২ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। ষাটোর্ধ কলাকুশলী অন্তত তিন মাস কাজ থেকে দূরে থাকুন। করোনা পরিস্থিতিতে শ্যুটিং শুরু হলে এমনই সব নিয়ম মানতে বলছে প্রডিউসার্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া।
গিল্ডের তরফে জারি করা ৩৭ পাতার ‘নিউ ওয়ার্কিং প্রোটোকল’ এর কয়েকটি নির্দেশের মধ্যে রয়েছি এইগুলি। গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে, বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে শ্যুটিং শুরু করতে হলে মানতেই হবে এই বিধিনিষেধ।
কয়েকদিন আগে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের পর ‘নিউ ওয়ার্কিং প্রোটোকল’ তৈরি হয়েছে। সেই ৩৭ পাতার বিজ্ঞপ্তির ‘প্রিপেয়ার টু প্রিভেন্ট’ সেকশনে বলা হয়েছে, শিল্পী, কলাকুশলী এবং অন্যান্যরা যাতে শ্যুটিং ফ্লোরে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানেন তা নিশ্চিত করতে হবে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, শ্যুটিংয়ের জায়গায় স্নানের ব্যবস্থা করার। তাছাড়া বারবার হাত ধোওয়ার জন্য পোর্টেবল ওয়াশ-বেসিন এবং স্যানিটাইজার রাখার কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট গাইডলাইনের অন্যতম জায়গা ‘হেয়ার অ্যান্ড মেক আপ প্রোটোকল’। বলা হয়েছে, একবার ব্যবহার করা যায় এমন মেক আপ কিট ব্যবহার করতে হবে। উইগ বা পরচুলা শ্যুটিং এর আগে ও পরে নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যতটা সম্ভব নিজস্ব মেক আপ কিট ব্যবহার করতে শিল্পীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মেক আপের পর মাস্কের জায়গায় ফেস শিল্ড ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া মেক আপ আর্টিস্টদের আবশ্যিকভাবে মাস্ক, গ্লাভস পরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রোডিউসার্স গিল্ডের গাইডলাইনে।
এই সমস্ত বিধিনিষেধ ছাড়া বিভিন্ন ফিল্ম অর্গানাইজেশনও নিজেদের স্টান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা SOP জমা দেবে সরকারের কাছে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল এই বিধিনিষেধ মেনে আদৌ কি শ্যুটিং সম্ভব?
ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (IMPPA) বলছে, গিল্ড যে গাইডলাইন দিয়েছে ছোট বা মাঝারি প্রযোজকদের পক্ষে তা মানা অসম্ভব। একমাত্র বিগ বাজেটের সিনেমাতেই এই বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খ মানা যাবে। আমাদের পরামর্শ ও আবেদন একটু আলাদা হবে বলে জানাচ্ছে ইম্পা। গত সপ্তাহেই তারা প্রযোজকদের কাছে আবেদন রেখেছিল, কলাকুশলী, টেকনিশিয়নদের বকেয়া পারিশ্রমিক মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। এখন শ্যুটিং শুরু হওয়ার পরে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর মেডিকেল ক্লেম থাকছে কিনা, থাকলে তা কে বহন করবে তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছে বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা ও সংগঠন।
এদিকে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শো, গেম শোয়ে বাইরের দর্শক রাখতেই হয়। তাঁদের বাদ রেখে কাজ করতে গেলে ওই শোয়ের পুরো পদ্ধতিই বদলে যাবে।
করোনার জেরে প্রায় দু’মাস বন্ধ ফিল্ম ও টিভির অনুষ্ঠানের সমস্ত শ্যুটিং। চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত টেকনিশিয়ান ও কলাকুশলীরা। কীভাবে এবং কত তাড়াতাড়ি আবার কাজ শুরু হবে সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।
Comments are closed.