করোনাভাইরাস নিয়ে যুযুধান দুই দেশ, আমেরিকা ও চিন। দ্বন্দ্ব এতটাই যে, চিনকে আড়ালের অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু চিনে যে সব আমেরিকান বহুজাতিক সংস্থার কারখানা রয়েছে, তাদের চিন ছেড়ে অন্য কোনও দেশে উৎপাদন শুরু করার আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই। এমনই এক সমীক্ষার রিপোর্ট উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানাচ্ছে, তবে দুই দেশের দ্বন্দ্ব যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে কতদিন এই আমেরিকান ফার্মগুলি চিন থেকে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।
বেজিং ও সাংহাইয়ে আমেরিকান চেম্বার্স অফ কমার্সের সঙ্গে PricewaterhouseCoopers সংস্থার একটি যৌথ সমীক্ষা বলছে, চিনে মার্কিন সংস্থাগুলির ৬৮ শতাংশের চাহিদা, উৎপাদন এবং পরিষেবা, সবই স্বাভাবিকের চেয়ে নীচে নেমে গিয়েছে।
শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমেরিকান চেম্বার্স অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট কের গিবস বলেন, আমাদের সমীক্ষার ফল বলছে, সংস্থাগুলি এখন নয়া ব্যবসায়িক নীতির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মগ্ন। কিন্তু কোভিড-১৯ এর জেরে এখন কেউ জায়গা ছাড়তে রাজি নয়।
আমেরিকান চেম্বার্স অফ কমার্সের যুক্তি, বর্তমান সঙ্কট এমনই যে কারখানা অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে উৎপাদন শুরুর সাহস দেখাতে পারবে না সংস্থাগুলি।
চিনের উহান থেকে প্রথম ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আজও যা অব্যাহত। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চিন নতুন করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করেছে, ফ্যাক্টরিগুলিতে কর্মীরা ফিরেছেন, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা হালকা হয়েছে। গত ৮ এপ্রিল ৭৬ দিনের লকডাউন শেষে বাণিজ্যক প্রদেশ উহানে ফের শুরু হয়েছে কাজ কর্ম।
আমেরিকা চিনের বিরুদ্ধে করোনার আসল তথ্য চেপে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। আর চিন বলছে আমেরিকা তাদের কালিমালিপ্ত করতে এসব রটাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ৬ থেকে ১৪ মার্চ ২৫ টি সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সার্ভে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য থেকে ভোগ্যপণ্য, বিভিন্ন সেক্টরের এমন কিছু সংস্থার একজিকিউটিভদের উপর সমীক্ষা চালানো হয়, যাঁদের বিশ্বব্যাপী রাজস্বের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। চেম্বার্স জানাচ্ছে, অর্ধেকের বেশি প্রতিক্রিয়া বলছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে তাদের চিনা সাপ্লাই চেন স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন হবে কি না তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ৪৪ শতাংশ মানুষ, যাঁরা মনে করছেন, চিন-আমেরিকা, এই দুই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পৃথক হওয়া অসম্ভব, যা গত অক্টোবরের সমীক্ষায় ছিল ৬৬ শতাংশ।
৭০ শতাংশ মনে করেন, তিন মাসের মধ্যে চিনে তাদের কাজকর্ম আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ৯৬ শতাংশের বিশ্বাস, এই সময়টা লাগবে তিন থেকে ছয় মাস।
Comments are closed.