Lockdown: গরমের ছুটিতে বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলেন? বিমান ভাড়া, হোটেল বুকিংয়ের টাকা ফেরত পাবেন কীভাবে?

সারা বিশ্বে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মারণ করোনাভাইরাস। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপে। বাদ যায়নি ভারতবর্ষও। লাফিয়ে লাফিয়ে এখানেও বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। আর তার জেরেই দেশজুড়ে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন। কিন্তু পরিস্থিতি যা, এই লকডাউন কতদিন চলবে, উঠে গেলেও কতদিন তার প্রভাব থাকবে বলা অসম্ভব।
প্রতি বছরই এ দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক বেড়ানোর জন্য ইউরোপ ও আমেরিকায় পাড়ি দেন। বিশেষত গরমের ছুটিতে, যখন স্কুল ও কলেজ ছুটি থাকে। এই সমস্ত বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই বিমানের টিকিট-সহ হোটেলের বুকিং সেরে ফেলতে হয়। অনেকেই অনেক আগে এই সব সেরেও ফেলেছেন। গরমের ছুটিতে বিদেশে বা দেশের কোনও প্রান্তে ঘুরতে যাওয়ার জন্য লাখ-লাখ টাকা ইনভেস্ট করে ফেলেছেন বহু মানুষ। এখন করোনার কারণে যেখানে গোটা বিশ্বের মানুষ কার্যত গৃহবন্দি, বন্ধ সারা বিশ্বের বিমান পরিষেবা, সেখানে এই সমস্ত বুকিং বাতিল করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

কিন্তু কেমন করে বাতিল করবেন আপনার বুকিং? আদৌ কি বিমানের টিকিট ক্যানসেল করতে পারবেন? আর ক্যানসেল করলেও কত টাকা ফেরত পাবেন? কত টাকা ক্যানসেলেশন চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া হবে? কতদিনের মধ্যে ফেরত পাবেন আপনার টাকা? স্বাভাবিক ভাবেই এই সমস্ত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

দেখুন, বিমান পরিষেবা বন্ধ। এই করোনার জেরে বিমান সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এই অবস্থায় বিমান টিকিট ক্যানসেল বা যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ভাবছে না উড়ান সংস্থাগুলি। উল্টে তারা যাত্রীদের সুবিধার্থে বিমানের টিকিটের ভ্যালিডিটি এক বছর বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৪-১৫ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

আন্তর্জাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে ভ্রমণের দিন পরিবর্তন বা রিভ্যালিডেট করলে যাত্রীদের ভরতে হয় ডেট চেঞ্জ পেনাল্টি। যা অনেক সময়ই টিকিটের দামের থেকে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা বেশি পড়ে যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই মুহূর্তে উড়ান সংস্থাগুলি সেই টাকা চার্জ করছে না।
বিশ্বের প্রতিটি উড়ান সংস্থার যা ভাড়া হয়, তা নির্ণয় থেকে শুরু করে যাবতীয় তত্ত্বাবধানের কাজ সামলায় ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। তারাই সারা বিশ্বে এয়ার ট্র্যাফিক কোঅর্ডিনেশনের নিয়মাবলি তৈরি করে এবং সমস্ত এয়ারলাইন্স যাতে সেই নিয়মাবলি মেনে চলে তার দিকে নজর রাখে।
এই আইএটিএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্ক সেটলমেন্ট প্ল্যান নামক সংস্থার মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক উড়ানের টিকিট কাটতে হয়।
এ তো গেল আন্তর্জাতিক উড়ানের কথা। তবে অধিকাংশ যাত্রী যাঁরা বিদেশ ভ্রমণে যান, তাঁরা অধিকাংশই একটি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখেন। সেই সব ক্ষেত্রে তাঁরা সেই দেশের ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সের টিকিটও আগেভাগেই বুক করে রাখেন। এই সব টিকিটের অধিকাংশ টিকিটই নো রিফান্ড পলিসি মেনেই কাটা হয়। কারণ, তাতে টিকিটের ভাড়া অনেকটাই কম গুণতে হয় যাত্রীদের। তাই অধিকাংশ যাত্রী এই নো রিফান্ড পলিসির টিকিট কিনতেই বেশি আগ্রহী হন।
কিন্তু এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে তো কোনও ভাবেই সেই উড়ানে চাপা সম্ভব নয়। সারা দুনিয়ায় প্রায় বন্ধ বিমান পরিষেবা। কিন্তু বিমান না চালালেও এই সমস্ত উড়ানগুলির টাকা ফেরত দিতে রাজি নয় সংস্থাগুলি। টিকিটের দাম ফেরত চাইতে গেলেই তারা এই নো রিফান্ড পলিসির কথা উল্লেখ করছে। কাজেই যাত্রীরাও এই বিমানের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
এরপর আসি হোটেলের কথায়। বিদেশ ভ্রমণের সময় অধিকাংশ পর্যটক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বা অনলাইনে হোটেল বুকিং করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে কিছু বড় হোটেল চেন বুকিং-এর টাকা ফেরত দিলেও, অধিকাংশ হোটেল এই মুহূর্তে টাকা ফেরত দিতে নারাজ। তারা অবশ্য অন্য একটি পথ খোলা রাখছে। পরবর্তীকালে যদি ওই ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অন্য কোনও পর্যটক হোটেলে থাকতে আসেন, সেই ক্ষেত্রে তারা টাকা অ্যাডজাস্ট করতে রাজি আছে। আর তাই এই হোটেলের অ্যাডভান্স বুকিং-এর টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা কবে হাতে আসবে তা বলতে পারছেন না কেউই। হয়ত লাগতে পারে ছয় মাস, আবার এক বছর।

এবার আসি ইউ রেলের কথায়। অধিকাংশ পর্যটক, যাঁরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘোরার উদ্দেশে যান, তাঁরা এক দেশ থকে অন্য দেশে যেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন ইউ রেলে। তাই অধিকাংশ যাত্রীই অনেক আগে থেকেই এই ট্রেনের টিকিট কেটে রাখেন। এই ট্রেনের মাধ্যমে যেমন অনেক জায়গায় ঘোরা যায় খুব অল্প সময়ে, ঠিক সে রকমই বিমানের তুলনায় ভাড়াও অনেকটা কম লাগে। কিন্তু এবার এই ট্রেনের টিকিট ক্যানসেল করতে গিয়েও সমস্যার মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। ক্যানসেল করলে টিকিটের দামের ২৫-৩০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। যদি যাত্রার দিন কাছাকাছি হয়, তাহলে বেড়ে যাচ্ছে ক্যানসেলেশন চার্জও। কাজেই ঘুরতে না গিয়েও বেশ অনেকখানি টাকা চোট যাচ্ছে পর্যটকদের।

এই পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির কথা শোনাচ্ছে ক্রুজ শিপের বুকিং। অনেক পর্যটক বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে ক্রুজ শিপে চড়ার আনন্দ উপভোগ করেন। এই ক্রুজে মাথা পিছু ৪-৫ হাজার ডলার ভাড়া লাগে। শুধু জাহাজে করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নয়, এই ক্রুজে অনেক রকমের অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন তাঁরা। এই ক্রুজের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত না দিলেও সমস্ত বুকিং-এর মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। কাজেই যে সমস্ত পর্যটক এখন যেতে পারছেন না, তাঁরা আগামী এক বছরের মধ্যে যেতেই পারেন।

তবে টিকিটের মেয়াদ বাড়ানোর পরও অনেক যাত্রীই সমস্যায় পড়েছেন। অনেকেই কর্মসূত্রে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কেটেছিলেন, কিন্তু এখন যেতে পারছেন না। কেউ অফিসের কাজে বা বা চিকিৎসাজনিত ব্যাপারে বিদেশ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তাঁরা পড়েছেন বেজায় সমস্যায়। কারণ, এই সময়েই তাঁদের সেখানে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। এরপর আর যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। অথচ উড়ান সংস্থা ভ্যালিডিটি বাড়ালেও টিকেটের দাম ফেরত পাচ্ছেন না তাঁরা। কাজেই তাঁদের মতো মানুষই সমস্যায় পড়েছেন বেশি। এখন প্রশ্ন হল, করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, কেউ জানে না। স্বাভাবিক হলেও দেশ বিদেশে যাতায়াত খুব সহজ হয়ে যাবে, এমনও নয়। সব কিছু স্বাভাবিক হতে দু’তিন বছরও লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিমান সংস্থাগুলির ছাড় কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশ এবং বিদেশে পর্যটন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা, মুশকিলে পড়বেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ।

 

(জয়দীপ মুখার্জি মেঘদূতম ট্র্যাভেলসের কর্ণধার)

Comments are closed.