Farmers Protest: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৈরি চার সদস্যের কমিটি, সদস্য কারা ?
কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ দিয়ে চার সদস্যের বিষেষ কমিটি গঠন করেছে শীর্ষ আদালত
কৃষি আইন নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় মোদী সরকারকে। আপাতত কেন্দ্রকে কৃষি আইন স্থগিত রাখার নির্দেশ বিশেষ কমিটি গঠনের কথা জানায় প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের বেঞ্চ। এই নির্দেশ অনুযায়ী চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হল। যে কমিটিতে আছেন ভূপিন্দর সিংহ মান, প্রমোদ কুমার যোশী, অশোক গুলাটি ও অনিল ঘনওয়াত। জানেন এঁদের পরিচয়?
অশোক গুলাটি
দেশের অন্যতম বিখ্যাত কৃষি অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি ২০১৫ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস (ICRIER)’ এর ইনফোসিস চেয়ার প্রফেসর গুলাটি ২০১১ থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত এগ্রিকালচারাল কস্টস অ্যান্ডস প্রাইসেস (CACP)’ এর প্রধান ছিলেন। বিভিন্ন ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিত এই প্যানেল এবং কেন্দ্রের কৃষি মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা।
কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, গত মে মাসে এই আইনের সমর্থনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন লেখেন অশোক গুলাটি। তবে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমে লেখা আর এক প্রতিবেদনে সরকারকে তাঁর পরামর্শ, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের লিখিত গ্যারান্টি দেওয়া উচিত।
ভূপিন্দর সিংহ মান
১৯৩৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের গুর্জনওয়ালায় জন্ম ভূপিন্দর সিংহ মানের। রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ বর্তমানে ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (BKU) জাতীয় সভাপতি এবং অল ইন্ডিয়া কিষান কো- অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান তিনি। যে সংগঠনেরমান জাতীয় সভাপতি সেই BKU নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম শরিক।
১৯৬৬ সাল থেকে কৃষক নেতা হিসেবে পরিচিত মান। সে সময় ফার্মার ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি কৃষক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পাশাপাশি অল ইন্ডিয়া কিষান কো- অর্ডিনেশন কমিটি (AIKCC) যারা সারা ভারতের কৃষক সংগঠনগুলিকে এক ছাতার নীচে নিয়ে এসেছে সেই সংগঠন তৈরিতেও অন্যতম সাহায্যকারী ছিলেন ভূপিন্দর সিংহ।
কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া এই কৃষক নেতার?কিছুদিন আগে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মান বলেন, ভারতের কৃষিক্ষেত্রকে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন। তবে কৃষকদের সুরক্ষার দিকটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে কিছু অসঙ্গতিরও সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মত তাঁর। পাশাপাশি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের লিখিত গ্যারান্টি যাতে সরকার দেয় সে ব্যাপারেও দাবি তোলেন ভূপিন্দর সিংহ। ভূপিন্দর ওই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কৃষকদের ফসল বিক্রির জন্য বেসরকারি ও রাজ্য সরকারচালিত বাজারের মধ্যে একটা সুব্যবস্থা থাকা দরকার।
অর্থাৎ, কৃষক সংগঠনগুলি যে কৃষি আইন পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন সেখানে ভূপিন্দর সিংহ মানের মত কিছুটা ভিন্ন।
প্রমোদ কুমার যোশী
১৯৫৩ সালের ২ মার্চ উত্তরাখণ্ডের আলমোরায় জন্ম প্রমোদকুমার যোশীর। এই প্রখ্যাত কৃষি অর্থনীতিবিদ ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IFPRI)- এর দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রাক্তন ডিরেক্টর। এছাড়াও হায়দরাবাদে অবস্থিত ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ম্যানেজমেন্টেরও প্রধানের পদে ছিলেন।
তিনি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ক্ষেত্রে আইনি সমর্থনের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সংবাদমাধ্যমে কৃষি আইনের বিরোধিতায় আন্দোলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন প্রমোদকুমার যোশী। সেখানে সহ লেখকের সঙ্গে প্রমোদবাবু লেখেন, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের বৈধতা নিয়ে কৃষকদের আন্দোলন আমাদের হতবুদ্ধি করে দিয়েছে। কৃষকদের উপর এই নয়া আইনের প্রভাব নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
অনিল ঘনওয়াত
মহারাষ্ট্রের এক কৃষক সংগঠনের সভাপতি অনিল ঘানওয়াত। যে শেটকারি সংগঠন পুরো কৃষক আন্দোলনেই সরকার পক্ষ সমর্থন জানিয়ে এসেছে। গত অগাস্ট মাসে এই সংগঠনের তরফে মহারাষ্ট্রের জেলায় মোদী সরকারের নয়া কৃষি আইনের সমর্থনে মিছিল বেরোয়। স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে লেখা চিঠি জমা দিয়ে নইয়া আইনকে স্বাগত জানান অনিল ঘনওয়াতরা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনে তাঁরা কতটা খুশি তা বোঝাতে রাস্তায় রাস্তায় বাজি ফাটায় অনিল ঘনওয়াতের সংগঠন।
গত ডিসেম্বর মাসে একটি সংবাদমাধ্যমকে অনিল জানান, কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনকে সমর্থন করছে আমাদের মতো বহু সংগঠনই। তাই কৃষক আন্দোলনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলি যখন ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছিল, সেখানে অংশ নেয়নি অনিল ঘনওয়াতের সংগঠন। তবে এই সংগঠনও নয়া আইনের কিছু কিছু জায়গায় সংশোধন প্রয়োজন বলে দাবি করেছে।
Comments are closed.