অরণ্য-উচ্ছেদে কার লাভ? প্রশ্ন ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’র প্রতিবেদনে, উচ্ছেদ রুখতে সুপ্রিম কোর্টে আদিবাসী মহিলা

দেশের বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসীদের জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। এবার সিট গড়ে সেই অভিযোগেরই তদন্ত চাইলেন এক আদিবাসী মহিলা। ছত্তিসগঢ়ের বাসিন্দা তারিকা তরঙ্গিণী লার্কা নামের ওই আদিবাসী মহিলা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে বলেছেন, শীর্ষ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিক, যাতে একজন অরণ্যবাসীকেও তাঁর জমি থেকে উচ্ছেদ হতে না হয় পাশাপাশি এসআইটি গঠন করে আদিবাসীদের বসবাসের জমি অধিগ্রহণেরও তদন্ত চেয়েছেন তিনি। গত ১৩ ই ফেব্রুয়ারি পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া আদিবাসী ও অন্যান্য অরণ্যবাসীদের উচ্ছেদের নির্দেশে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। অস্তিত্বের সংকটে পড়েছিলেন দেশের ২০ লক্ষেরও আদিবাসী ও অন্যান্য অরণ্যবাসী। যদিও গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি এই রায়ে অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ফলে সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন কয়েক লক্ষ দরিদ্র অরণ্যবাসী মানুষ।
‘ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’ ম্যাগাজিনে ১লা মার্চ প্রকাশিত ‘Who Is the Encroacher of Tribal Lands?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যে অরণ্যবাসী মানুষদের বিরুদ্ধে জোর করে জায়গা দখল করে বনভূমি ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীর প্রাণ সংশয়ের অভিযোগ করা হচ্ছে, তা কতটা যুক্তিযুক্ত।
ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে কখনও শিল্পায়ন আবার কখনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাঁধ তৈরি, রাস্তা তৈরি ইত্যাদি সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণের তাগিদে যেভাবে নির্বিচারে দেশের অরণ্য ধ্বংস করা হয়েছে, তার বিরূপ প্রভাব কেবল পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর ওপরই পড়েনি, যে আদিবাসী ও অন্যান্য অরণ্যবাসীরা দীর্ঘকাল ধরে ওই অঞ্চলগুলিতে বসবাস করছেন, তাদেরও সংকট ডেকে এনেছে। সে সংকট অস্তিত্বের সংকট।
ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে নজিরবিহীনভাবে বনভূমিতে বহুজাতিক সংস্থাগুলির প্রবেশ আদিবাসীদের অস্তিত্বকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশ, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে, নির্বিচারে গাছপালা কেটে শিল্প গড়ে যাচ্ছে তাদেরকে বাড়তে দিয়ে, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ দূষণের জন্য কেবলমাত্র দায়ী করা হচ্ছে অরণ্যবাসী আদিবাসীদের। এই যুক্তি হাস্যকর বলে দাবি প্রতিবেদনে।
ইপিডব্লু-র মূল্যায়ন, পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে যাদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই অরণ্যবাসী আদিবাসীদের হাতেই বরং ভারতের বনভূমি অনেক বেশি সুরক্ষিত।
বন দফতরের অনেক অফিসার, শহুরে এবং এলিট সংরক্ষণবাদীরা অরণ্যের অধিকার আইন তৈরির শুরু থেকে আইন বলবৎ করা পর্যন্ত এর বিরোধিতা করে এসেছেন।

এই অরণ্য আইন তৈরি হয়েছে তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে। প্রথমে গ্রামসভায় সুপারিশ করা হয় কারা অরণ্য অঞ্চলে বসবাসের দাবিদার। দ্বিতীয় ধাপে সাব ডিভিশনাল কর্তৃপক্ষ এই সুপারিশ পর্যলোচনা করেন। শেষধাপে তা যাচাই করে বন দফতর। তারপরে কারা জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ হবেন তার খসড়া তৈরি হয়।
ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, অরণ্যের অধিকার থেকে যাঁদের দাবি খারিজ হয়েছে, এমন নয় যে সবক্ষেত্রেই তাদের আবেদন কোনও ন্যায্য কারণে খারিজ হয়েছে। হয়তো এর মধ্যেই রয়েছে কোনও ‘লবি’, যাদের ইচ্ছা অরণ্যজীবীদের বাসস্থান বা চাষের জমি কোনও প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া। এর আভাস কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রকও পেয়েছে বলে দাবি ওই প্রতিবেদনে।
অরণ্য আইন মামলায় আদিবাসীদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গ তাই আরও নিবিড়ভাবে সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনা করা উচিত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি।

 

Comments are closed.