প্রায় নীরবে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন রাজীবকন্যা প্রিয়াঙ্কা বঢড়া। রাহুল গান্ধীর সভাপতি পদে অভিষেক বেশ বড় করে হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা এলেন নীরবে। প্রেস রিলিজ দিয়ে ঘোষণা করা হল প্রিয়াঙ্কার দায়িত্ব। তাও প্রেস রিলিজের প্রথম নাম প্রিয়াঙ্কা নয়। এবং গোটা উত্তর প্রদেশের দায়িত্বও নয়, কংগ্রেস পূর্ব উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব দিল প্রিয়াঙ্কাকে। এই ‘লো প্রোফাইল’ নীরবতা অবশ্যই রাজনৈতিক কৌশল। কৌশলটা মনে হয় কাজেই এল। রাজনীতিতে যাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, তাদেরও দেখা গেল প্রিয়াঙ্কা নিয়ে আলোচনা করতে। আলোচনার বিষয় একটাই, ইন্দিরার ছায়া কতটা স্পষ্ট প্রিয়াঙ্কার মুখে।
কেন প্রিয়াঙ্কা?
শতবর্ষ পেরনো দল কংগ্রেসকে মাত্র ২ টি আসন ছেড়ে এসপি-বিএসপি যে ‘অপমান’ করেছে, প্রিয়াঙ্কাকে উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে এনে ভোটের বাজারের আলো অবশ্যই কিছুটা টেনে নিল কংগ্রেস। এটা হল প্রথম কারণ। যদিও রাহুল বলেছেন, অখিলেশ-মায়াবতীদের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও বিরোধ নেই। যেহেতু তাঁদের উদ্দেশ্যের সঙ্গে কংগ্রেসের উদ্দেশ্যের কোনও ফারাক নেই।
দ্বিতীয় কারণ, ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেস কোনও সুযোগই ছাড়তে রাজি নয়। ইংরেজিতে যাকে বলে, নো স্টোন আনটার্ন। ভাই-বোনের এই যৌথ উদ্যোগকে ২০১৯ এর ভোটে ভারতীয় জনতা কীভাবে নেয় সেটা জানতে অবশ্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
তৃতীয় কারণ, আনুষ্ঠানিক পদ গ্রহণের এক বছরের মধ্যে রাহুল গান্ধী হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের বিধানসভার ভোটে যে সাফল্য দেখিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে এসে প্রিয়াঙ্কার কাছেও কংগ্রেসের প্রত্যাশা অনেক।
চতুর্থ কারণ, বৃদ্ধ বনাম তারণ্যের যুদ্ধ, ২০১৯ এ কংগ্রেসের এটা একটা বড় ইউএসপি।
পঞ্চম কারণ, রাহুলকে কেউ জওহরলালের ছায়া মনে করেন না, কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকে ইন্দিরার ছায়া মনে করেন অনেকেই। এই বাড়তি সুযোগটা নিতে চায় কংগ্রেস।
ষষ্ঠ কারণ, বিহারে যতই জোট হোক কংগ্রেসকে খুব বেশি আসন ছাড়বেন না লালুপ্রসাদ যাদবরা। উত্তর প্রদেশ, বিহার থেকে বাড়তি কিছু আসন না আনতে পারলে কংগ্রেসের সম্মানজনক অবস্থানই থাকবে না ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে। সেই কথা মাথায় রেখেই দলে প্রিয়াঙ্কার এই সংযোজন।
সপ্তম কারণ, গান্ধী পরিবারে এবং প্রিয়াঙ্কার নিজেরও দ্বিধা ছিল রবার্ট বঢড়াকে নিয়ে। ধারণা ছিল, সক্রিয় রাজনীতিতে না এলে মোদী সরকার হয়তো বঢড়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, গান্ধী পরিবারকে বিরক্ত করার জন্য বিজেপি কোনও সুযোগই ছাড়তে রাজি নয়। বরং রাজনীতিতে নেমে পড়ার পর, কংগ্রেস প্রতিহিংসার রাজনীতির কথা টেনে আনতে পারবে। ফলে সব দ্বিধা কাটিয়ে গান্ধী পরিবারকে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতেই হল।
অষ্টম কারণ, জয়ললিতা প্রয়াত। অনেক চেষ্টা করেও সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে বা শীলা দিক্ষিতরা, বহু বার ভোটে জিতলেও, নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। যে অর্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেত্রী, মায়াবতী নেত্রী, তেমন নেত্রী এখন আর কোনও দলে নেই। গান্ধী পরিবার সম্ভবত একটা নতুন পরীক্ষায় নামল। সফল, অসফল তো বলবে ভবিষ্যৎ।
নবম কারণ, আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেস রাজনীতির অন্দরমহলের বাসিন্দা অনেক দিন ধরেই। বহু সাংবাদিক, যাঁরা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কথা বলেছেন রায়বেরিলি, আমেঠিতে ভোট কভার করতে গিয়ে, তাঁরা প্রত্যেকেই এক মত, প্রিয়াঙ্কা অসম্ভব বিনয়ী, প্রখর বুদ্ধিমতী এক মহিলা। বংশগৌরবের অহঙ্কারের লেশমাত্র প্রকাশ নেই আচরণে। বিদ্বেষের রাজনীতির পরিবর্তে উত্তর প্রদেশে প্রিয়াঙ্কা যদি কোনও ম্যাজিক দেখাতে পারেন, তূণে তির যখন রয়েছে, সেই সুযোগ এই কঠিন সময়ে হাত ছাড়া করবে কেন কংগ্রেস!
দশম কারণ, এমন হতেই পারে প্রিয়াঙ্কা ভোটে দাঁড়ালেন না, কিন্তু উত্তর প্রদেশে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সেক্ষেত্রে এমন হতেই পারে, বিজেপিকে হয়তো উত্তর প্রদেশে বাড়তি সময় দিতে হবে। বেশি ব্যস্ত থাকতে হবে। ‘প্রিয়াঙ্কা লাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগানটা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। সন্দেহ নেই, সক্রিয় রাজনীতিতে এই প্রবেশের ফলে দলের যুব এবং তরুণদের অনেকটাই চাঙ্গা করে তুলবেন প্রিয়াঙ্কা।
ইন্দিরাকে একসময় গুঙ্গি গুড়িয়া নাম দিয়েছিলেন বিরোধীরা। রাহুলকে পাপ্পু। দেখা যাক, রবার্ট বঢড়া প্রসঙ্গ বাদে বিরোধীদের আর কী নতুন আক্রমণের মুখে পড়তে হয় রাজীব কন্যা প্রিয়াঙ্কাকে।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
Comments are closed.