সরকারের বিরোধিতা মানেই দেশ বিরোধিতা নয়। সরকারের বিপরীত মত পোষণ করলে তা দেশ-বিদ্বেষ নয়, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক গুপ্তার।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ‘ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ডিসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় বিচারপতি গুপ্তা বলেন, শাসক, বিচারব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র কিংবা সেনাবাহিনীর সমালোচনাকারীকে ‘দেশবিরোধী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া অনুচিত। যদি আমরা এই ধরনের সমালোচনা নিতে না পারি, তা হলে গণতন্ত্রের জায়গায় পুলিশের দেশ হিসেবে গণ্য হব। স্বাধীন দেশে প্রশ্ন করা, চ্যালেঞ্জ জানানো, যাচাই করা, সরকারের দায়িত্ব নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার রয়েছে তার নাগরিকের।
আরও জানতে ক্লিক করুন, ভিন্নমতকে দেশদ্রোহিতা বলে দাগিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রের হৃদয়ে আঘাত বলেছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়
দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজকর্মী, আইনজীবী থেকে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধ মতকে ‘দেশবিরোধী’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া, দেশদ্রোহিতার মামলার কড়া সমালোচনা করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। তিনি বলেন, সম্প্রতি একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বিরোধী মতকে দেশবিরোধীর তকমা দেওয়া হচ্ছে। আধিপত্যবাদ গণতন্ত্রের তীব্র বিরোধী বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি দীপক গুপ্তা। তিনি যোগ করেন, কোনও রাজনৈতিক দলের ৫১ শতাংশ জনাদেশ পাওয়া মানেই যে দেশের বাকি ৪৯ শতাংশ পাঁচ বছরের জন্য চুপ করে থাকবে, এটা হতে পারে না। বিশাল সংখ্যক ভোটারের সমর্থন নিয়ে আসা কোনও নির্বাচিত সরকার দাবি করতে পারে, তারা দেশের সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, দেশের সমস্ত মানুষ সেই সরকারের পাশে রয়েছে। দেশের বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলেন, মানুষের অধিকার রক্ষা করা এবং ক্ষমতার বলে যাতে মুষ্টিমেয় বিরোধীকে দমন করা না হয়, তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব আদালতের।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশজোড়া আন্দোলনের আবহে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শাহিন বাগ আন্দোলন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হচ্ছে দিল্লি। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বিচারপতি গুপ্তা জানান, মুষ্টিমেয় শ্রেণির খেয়াল-খুশিকে হাওয়া দেওয়া নয়, আইন মেনে চলাটাই সুষ্ঠু শাসন পরিচালনা। এমনটা নয় যে, সরকার সবসময় ঠিক। নাগরিকদের অধিকার আছে শান্তিপূর্ণভাবে জড়ো হওয়ার ও বিরোধিতা করার।
বিচারপতি দীপক গুপ্তার কথায়, ‘বিরোধিতা হল মানুষের অধিকার। একটি সমাজ বিবর্ধিতই হবে না, যদি তার আইন নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে। তাই বিরোধিতাকে উৎসাহ দিতে হবে। শুধুমাত্র সুষ্ঠু মতান্তর, আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। তাই কোনও আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার অধিকার সরকারের নেই, যতক্ষণ না সেই প্রতিবাদ হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। বিরোধিতা তো মহাত্মা গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলনের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তখনই স্বাধীন রাষ্ট্র, যেখানে সবার মত প্রকাশের অধিকার থাকবে।
Comments are closed.