ভিন্নমতকে দেশদ্রোহিতা বলে দাগিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রের হৃদয়ে আঘাত, মন্তব্য বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের

কেউ ভিন্নমত পোষন করলেই তাঁকে দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া আসলে দেশের সংবিধানের ওপর আঘাত। দেশের সংবিধানকে রক্ষা করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাতে আঘাত করার সমান। সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্নমত আসলে একটি সেফটি ভালভ হিসেবেই কাজ করে, এমনই মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

শনিবার আহমেদাবাদে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ভিন্নমতকে দেশবিরোধী বা অগণতান্ত্রিক বলা মানে দেশের সংবিধানকে রক্ষা করার যে কথা বলা হয় এবং দেশের গণতন্ত্র আরও বিকশিত হওয়ার যে কথা বলা হয়, তার হৃদয়ে আঘাত করা। উল্লেখ্য, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আনা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, বিজেপির তরফে তাঁদেরকে দেশবিরোধী বলে আখ্যায়িত করছেন। এমনকী কোনও কোনও বিজেপি নেতা-মন্ত্রী নিদান দিয়েছেন প্রতিবাদীদের গুলি করে মারার। রাস্তায় নেবে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ, এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২৮ জনের প্রাণ গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন সেখানে যে ঝামেলা হয় এবং তার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদীদের সম্পত্তি ক্রোক করার যে সিদ্ধান্ত উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলার শুনানি যে বেঞ্চে হচ্ছে সেই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
এদিন কারও নাম না করে বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেছেন, প্রতিবাদ দমানোর নামে যদি পুলিশ প্রশাসনকে কাজে নামানো হয় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে যদি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়, তা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। দেশে শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক যে বৈচিত্র রয়েছে, তাকে বৃদ্ধি করতে যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমতের গুরুত্ব রয়েছে বলেও মনে করেন এই বিচারপতি। তাই ভিন্নমতকে কখনই দমিয়ে রাখা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।

 

Comments are closed.