করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং তো বটেই, বারবার সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা। মুখ, চোখ ও নাকে হাত না দেওয়া নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা। কারণ, পাশের করোনা আক্রান্তের ড্রপলেট হাতের মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু জানেন কি, আপনার জুতো থেকেও ছড়াতে পারে এই মারণ ভাইরাস? এবং এখনও পর্যন্ত সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, চিনে করোনা জীবাণুর অন্যতম বাহক হিসেবে কাজ করেছে জুতো! কিন্তু কেন? কীভাবে?
করোনাভাইরাস ঠেকানোর প্রক্রিয়া, কীভাবে তা ছড়ায় তা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে চলছে গবেষণা। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ মহলের একটি বড় অংশের মত, জুতোর সোলে ৫ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনাভাইরাস!
বিভিন্ন সারফেসে করোনাভাইরাস কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, স্টেনলেস স্টিলের ৩ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনা। প্লাস্টিক সারফেসেও তাই। তবে কার্ডবোর্ডের উপর ৩ ঘন্টা, তামার উপর ৪ ঘন্টা এবং অ্যারোসল (বাতাস) এর মধ্যে করোনাভাইরাসের বেঁচে থাকার মেয়াদ ৩ ঘণ্টা। কাপড়ের মধ্যে করোনা কতক্ষণ টিকে থাকে, তা নিয়েও চলছে কাটাছেঁড়া। এর মধ্যেই জুতোও কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে কি না তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
করোনাভাইরাস কীভাবে জুতোর মাধ্যমে ছড়ায়?
ধরুন লকডাউন মেনে আপনি সারাদিন বাড়িতে আছেন। কিন্তু বাজারের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে পা রাখতেই হল। দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করে ফিরলেন। বাড়ি ফিরে ভালো করে হাতও ধুলেন। কিন্তু রাস্তায় কারও ছেটানো থুতু, ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া কোনও জিনিসে যদি করোনা থেকে থাকে এবং তা মাড়িয়ে যদি আপনি বাড়ি ফেরেন, তবে? সেই জুতো পরে ঘরে ঢুকলেন! হাত ভালো করে ধুলেন এবং ভাবলেন আপনি সুরক্ষিত আছেন! তা কিন্তু একেবারেই নয়। কারণ, সেই জুতো পরে আবার পরদিন বাইরে বেরোলেন এবং তা পরার সময় জুতোর মধ্যে দিয়ে হাতে চলে এল ভাইরাস। বাইরে কিছু ছুঁলেন না, কিন্তু নিজের অজান্তেই জুতোর ভাইরাস চলে গেল শরীরে! কারণ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুতোর সোলে ৫ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনা!
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
জুতোর মধ্যে দিয়ে করোনা ছড়ানোর বিষয়ে নানা বিশেষজ্ঞের নানা মত। যেমন, টরেন্টোর হাম্বার রিভার হসপিটালের প্রধান তথা ইনফেকশাস ডিজিস বিশেষজ্ঞ ডাঃ মাইকেল গার্ডাম Global News কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে জামা কাপড় ও জুতো পরিষ্কার করার প্রয়োজন নেই। যদিও তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে রাজি নন যে, জুতোও করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারে কি না। বরং তাঁর মত, সাবধানতার জন্য জামাকাপড় ও জুতো পরিষ্কার করে নেওয়াই ভালো।
আবার Huffington Post এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জর্জিন ন্যানোস নামে এক বিশিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছেন, জুতো থেকেও করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা আছে। বিশেষত, যদি কেউ ভিড়, জনবহুল এলাকা থেকে ঘুরে আসেন কিংবা অফিসে যাতায়াত করেন, সেক্ষেত্রে আশঙ্কা থেকেই যায়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিস বলছে, প্লাস্টিকের মতো পদার্থ দিয়ে তৈরি জুতোতে ৩ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সক্ষম করোনা। আবার ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার মাইক্রোবায়োলজিস্ট চার্লস গেরবার মত, জুতোর সোল যদি নন-পোরাস পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, যেমন, রাবার, চামড়া, পিভিসি কম্পাউন্ড, সেক্ষেত্রে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের হার প্রবল। ভাইরাসের বাহক হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮ সালের একটি গবেষণা বলছে, মোটামুটি যে কোনও ধরনের জুতোই ৪ লক্ষ ২১ হাজার ব্যাক্টেরিয়া, প্যারাসাইট এবং ভাইরাস বহন করতে পারে।
Huffington Post এর প্রতিবেদনে কোয়াঞ্জা পিঙ্কনি নামে এক বিশিষ্ট চিকিৎসককে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, জুতোর সোলের উপর নজর দেওয়া জরুরি। কারণ, জুতোর উপরিভাগের চেয়ে সোলই ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস ও ভাইরাসের থাকার সুবিধেজনক জায়গা।
এই বিষয়ে New York Post এর একটি প্রতিবেদনও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতকে উদ্ধৃত করে সাবধান করছে, ৫ দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে জুতোর সোলে।
বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে কী করবেন?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাড়িতে ফিরে কোনও জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে ভালো করে জুতো মুছে ঘরের বাইরে রাখুন। জুতোজোড়া যদি প্লাস্টিকের মতো কোনও পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, তবে অবশ্যই তা ধুয়ে ফেলুন। বাচ্চারা যেহেতু বারবার মুখে হাত দেয়, তারা জুতো খোলার পর যাতে ভালোভাবে হাত-মুখ ধুয়ে নেয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments are closed.