কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ফের চাঙা করতে গরিবদের হাতে সরাসরি টাকা তুলে দেওয়ার জোরালো সওয়াল করলেন অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। বললেন, দরকারে টাকা ছাপাক কেন্দ্র। কারণ, আসল কথা হল অর্থনীতিকে সচল রাখা।
করোনা থাবায় ত্রাহি রব বিশ্ব অর্থনীতিতে। আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষণা হয়েছে। বিভিন্ন সরকার অর্থনীতিতে অক্সিজেন যোগানোর স্বার্থে ঘোষণা করছে আর্থিক প্যাকেজ। ভারতেও তার অন্যথায় হয়নি।
প্রথম দফায় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পর ফের দ্বিতীয় দফায় প্যাকেজের কথা ভাবনাচিন্তা চলছে কেন্দ্রে। এই পরিস্থিতিতে গরিবের কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তৃতীয় বিশ্ব তথা উন্নয়নশীল অর্থনীতির ভারত। বুধবার ফিকির বেঙ্গল চ্যাপটারের উদ্যোগে আয়েজিত ওয়েবিনারে (ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেমিনার) এই প্রসঙ্গে দাওয়াই বাতলে দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি।
গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার নীতির বরাবরের সমর্থক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ডলারের তুলনায় টাকার দামের লাগাতার অবমূল্যায়ন, মূল্যবৃদ্ধি কিংবা ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়ার মতো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এটা নয়। ভারতে সিংহভাগই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। করোনা থাবা এবং লকডাউনে যা ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজারে চাহিদা এমনিতেই কম ছিল, করোনা পরিস্থিতি তা আরও সঙ্গীন করে তুলেছে।
এমআইটির অধ্যাপকের মতে, এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে বাঁচানোর একটিই উপায়। তা হল, মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দিয়ে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তা করতে প্রয়োজনে টাঁকশালে টাকা ছাপানো হোক, বলছেন অভিজিৎ বিনায়ক।
টাকা ছাপানোর পরামর্শের অবশ্য তীব্র বিরোধিতা এসেছে অর্থনীতিবিদদেরই একাংশের তরফে। তাঁদের দাবি, একইভাবে টাকা ছাপিয়ে মানুষের হাতে তুলে দিলে বেলাগাম হতে পারে মৃল্যবৃদ্ধি। তা সামলানো হবে কী করে?
এই প্রশ্ন যে উঠবে তা সম্ভবত জানতেন নোবেলজয়ী। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, আমাদের ঠিক করতে হবে আসল সমস্যা কোনটা, মূল্যবৃদ্ধি বা ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়া, নাকি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তির অচল হয়ে পড়া। সাধারণ সঙ্কটে মূল্যবৃদ্ধি বা ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়া নিয়ে মাথা ঘামানো গেলেও বর্তমান অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে কৌশল বদলাতেই হবে। এই সময় মূল্যবৃদ্ধি বা ক্রেডিট রেটিং কমার মত অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছেড়ে মূল বিষয়ে নজর দিতে হবে। তা হল, মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া। আর ভারতের অর্থনীতির যা চরিত্র এবং সম্ভাবনা তাতে আপাতত মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। কারণ যে কোনও মূল্যে অর্থনীতিকে বাঁচাতেই হবে।
অর্থনীতি বাঁচলেই আসবে ঋণ শোধ করা কিংবা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের কথা। কিন্তু অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিকে বাইরে রেখে কোনওভাবেই হিসেব মেলানো যাবে না, মত অর্থনীতিবিদের। অভিজিৎ বিনায়ক বলছেন, বাজারে চাহিদা তৈরি হওয়ার পর রেটিং বাড়ানো কিংবা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ খুব একটা সমস্যার হবে না।
গরিবের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জনধন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার পক্ষে সওয়াল করেছেন আরেক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা অভিজিৎ বিনায়কের স্ত্রী এস্থার ডুফলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৯২৯ সালের মহা মন্দার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
Comments are closed.