লকডাউন: দেশে শহরাঞ্চলের প্রতি ১০ জনে ৮ জনের জীবিকায় কোপ! কৃষি ছাড়া সমস্ত ক্ষেত্রে আয় কমেছে ৯০%, বলছে সমীক্ষা
করোনার প্রভাবে দেশ তথা সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এই ক্ষতির মাত্রাটা ঠিক কেমন তার একটা খতিয়ান দিল আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতে লকডাউনের মধ্যে কাজ খুইয়েছেন ৬৭ শতাংশ কর্মী এবং চাকুরিজীবী।
অতিমারি করোনাভাইরাসের জোর প্রভাব পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতে। আর করোনা রুখতে দেশব্যাপী যে লকডাউন চলছে, তাতে শহরের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের জীবিকায় কোপ পড়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চলে জীবিকায় কোপ পড়েছে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের।
প্রায় ১০ টি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের ৪ হাজারের একটি ফোন সার্ভে করেছেন আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পড়ুয়ারা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা, এই ১২ টি রাজ্যের উপর সার্ভে হয়। তাতে দেখা হয়েছে, লকডাউনের প্রভাব কতটা প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবন ও জীবিকায়। সরকারি সাহায্যই বা তাদের কতটা উপকার করছে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, লকডাউনের মধ্যে কাজ হারানোর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে দেশের শহরাঞ্চলের সেল্ফ-এমপ্লয়েডদের উপর। এঁদের ৮৪ শতাংশ ইতিমধ্যে জীবিকা খুইয়েছেন। বেতনের ভিত্তিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ কর্মহীন হয়েছেন এই লকডাউনে। ক্যাজুয়াল ওয়ার্কারদের মধ্যে এই পরিসংখ্যানটা ৮১ শতাংশ।
গ্রামীণ এলাকাতেও জীবিকার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। সমীক্ষা বলছে, দেশের গ্রামাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ শ্রমিকের কাজ চলে গিয়েছে। বেতনের ভিত্তিতে কাজ করা ৬২ শতাংশ কর্মী এবং অন্যান্য গ্রামীণ কর্মীর ৪৭ শতাংশ কর্মহীন হয়েছেন এই লকডাউনের মধ্যে।
কৃষিক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে যুক্ত কর্মী ও শ্রমিকের পারিশ্রমিক গড়ে ৯০ শতাংশ কমেছে। আগে প্রতি সপ্তাহে যাঁরা ২ হাজার ২৪০ টাকা রোজগার করতেন, এখন তাঁদের আয় দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১৮ টাকায়!
ক্যাজুয়াল ওয়ার্কারদের আগে সাপ্তাহিক রোজগার ছিল গড়ে ৯৪০ টাকা। তা লকডাউনে অর্ধেকে গিয়ে ঠেকেছে। সংশ্লিষ্ট সমীক্ষা বলছে, সমস্ত বেতন প্রাপকদের মধ্যে ৫২ শতাংশ কর্মীর হয় স্যালারি কেটে নেওয়া হচ্ছে, অথবা পুরো বেতনই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
দেশের পরিবারগুলির উপর এই অতিমারির প্রভাব কেমন?
মোট ৪৯ শতাংশ পরিবার জানাচ্ছে, তাদের হাতে সপ্তাহের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার অর্থই নেই। শহরাঞ্চলের ৮০ শতাংশ এবং গ্রামের ৭০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, খাবারের উপর ব্যয় আগের থেকে অনেক কম করছে তারা।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের শহরগুলির এক তৃতীয়াংশের বেশি বা ৩৬ শতাংশ পরিবার বলছে, অন্তত একবার তারা সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্য পেয়েছে এই লকডাউনে। গ্রামের ক্ষেত্রে ৫৩ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, লকডাউনের মধ্যে তারা সরকারি অনুদান পেয়েছে।
Comments are closed.