চলতি বছরের প্রথমভাগে ক্রেডিট সংস্থা ইক্রা রেটিংয়ে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে Indian Pharmaceutical Industry বা ওষুধ শিল্পের বৃদ্ধি ১০ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত ধরা হয়েছে। কম খরচে বিশাল উৎপাদন এবং বিশ্বমানের জেনেরিক ড্রাগ তৈরিতে বিখ্যাত ভারত। পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের মোট ফার্মাসিউটিক্যাল চাহিদার ২০ শতাংশ মেটায় ভারত। বলা যায়, এ দেশের হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর দ্রুত উন্নয়নশীল সেক্টরের মধ্যে একটি। ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্রে ভারতের শক্তির জায়গা হল জেনেরিক ড্রাগ যা, ২০১৮ সালে একাই এই সেক্টরের প্রায় ৭০ শতাংশ আয় তুলে এনেছিল।
ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের বৈশিষ্ট্য (Indian Pharmaceutical Industry)
Indian Pharmaceutical Sector -এ নির্দিষ্ট কিছু চারিত্রিক বৈশষ্ট্য আছে। যার ফলে ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধি, দুইই আছে ভারতের। প্রথমত, ব্র্যান্ডেড জেনেরিক্স মার্কেটে প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা করার ক্ষমতা ধরে রেখেছে ভারত। আমেরিকার এফডিএ স্বীকৃত সবচেয়ে বেশি জেনেরিক ড্রাগের প্ল্যান্ট রয়েছে এ দেশেই।
জেনেরিক ড্রাগ হল ফার্মাকোলজিক্যালি ব্র্যান্ডেড ড্রাগের সমতুল্য। ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে বহু আঞ্চলিক সংস্থা আছে যারা বিশ্বব্যাপী নিজেদের বাজার ধরে রেখেছে। ভারতের কয়েকটি ডোমেস্টিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম হল Aurobindo, Cipla, Desano, Emcure, Hetero Labs এবং Laurus Labs ইত্যাদি।
এই ক্ষেত্রে সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং জেনেরিক উৎপাদন বিশাল হওয়ার কারণে ভারতীয় উৎপাদনকারী ওষুধের মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ফার্মা প্রোডাকশন ভ্যালুর দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ভারতের স্থান দশম এবং উৎপাদনের পরিমাণে ভারত তৃতীয়। ভারতের ড্রাগস ও ফার্মাসিউটিক্যালস রফতানির ব্যাপকতা বহু বিদেশি বিনিয়োগকারীকে উৎসাহ দিয়েছে। সরকারও এই সেক্টরের আরও উন্নতির জন্য সাহায্য করে এসেছে। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, কম রাখার জন্য নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা আছে।
করোনার প্রেক্ষিতে Indian Pharmaceutical Market
অতিমারি করোনাভাইরাসের দাপটে আজ সারা দুনিয়া ত্রস্ত। তবে এই কোভিড-১৯ Indian Pharma Industry কিছু দুর্বলতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কাঁচামালের জন্য করোনা বিধ্বস্ত চিনের উপর অতি নির্ভরতা যে একেবারেই ঠিক নয় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের জেরে আমদানি ও রফতানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে।
যা দেশের pharma market কে প্রভাবিত করেছে। তবে চলতি বছরের মার্চে ভারত সরকারের ‘চায়না-প্লাস-ওয়ান’ পলিসি এই সাপ্লাই চেনের শূন্যস্থান পূরণ করতে কিছুটা সাহায্য করেছে। পাশাপাশি, করোনাভাইরাসের জন্য Cipla, Dr. Reddy’s এবং Zydus Cadila ইত্যাদি বড় বড় ওষুধ কোম্পানি যে একযোগে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো অতি প্রয়োজনীয় ড্রাগ তৈরি করছে তা বিশ্বব্যাপী ভারতীয় ফার্মা সেক্টরের চাহিদা বাড়াচ্ছে। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়েও আছে ভারত। এর সাফল্যের উপর নির্ভর করছে আগামী দিনে কত লম্বা দৌড়তে পারবে ভারতীয় ফার্মা সেক্টর।
ভারতের দশটি প্রথম শ্রেণির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি (Top 10 Pharma Company in India)
দেশের ফার্মা কোম্পানির অধিকাংশই হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, আহমেদাবাদ এবং বিশাখাপত্তনমে অবস্থিত। দেশের প্রথম শ্রেণির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি হল-
অরবিন্দ ফার্মা লিমিটেড (Aurobindo Pharma Ltd)
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংস্থা। হায়দরাবাদে রয়েছে সংস্থার সদর দফতর। দেশের অন্যতম প্রধান এই ফার্মা কোম্পানি অ্যান্টি-অ্যালার্জিক, অ্যান্টিবায়োটিক, কার্ডিওভাস্কুলার প্রোডাক্ট ইত্যাদি উৎপাদনে বিশেষ নাম করেছে। এছাড়া ওষুধ বিদেশে রফতানির বাণিজ্যেও বিশেষ সুনাম রয়েছে অরবিন্দ ফার্মা লিমিটেডের।
ক্যাডিলা হেলথকেয়ার লিমিটেড (Zydus)
১৯৫২ সালে রমনভাই প্যাটেল এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের প্রথম দশটি ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার নাম করলে ক্যাডিলা-র নাম নিতেই হবে। আহমেদাবাদে এই সংস্থার হেডকোয়ার্টার। ‘Zydus Cadila’ বিভিন্ন ফার্মা প্রোডাক্ট উৎপাদন করে। তবে ডায়াগনোস্টিক, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট, হার্বাল প্রোডাক্ট ইত্যাদি উৎপাদনে এই কোম্পানির আলাদা সুনাম রয়েছে।
সিপলা লিমিটেড (Cipla Ltd)
সিপলা হল একটি বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ও বায়োটেকনোলজি সংস্থা। যার হেডকোয়ার্টার রয়েছে মুম্বইয়ে। ১৯৩৫ সালে এই সংস্থার পথ চলা শুরু। বিশেষত কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিস, আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, ওয়েট কন্ট্রোল, ডিপ্রেশন ইত্যাদি অসুখের ওষুধ উৎপাদনে বাজারে আলাদা জায়গা রয়েছে সিপলার।
ডিভিস ল্যাবেরোটরিজ লিমিটেড (Divis Laboratories Ltd)
১৯৯০ সালে এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার পথ চলা শুরু। হায়দরাবাদে এর মূল সংস্থাটি রয়েছে। এছাড়াও বিশাখাপত্তনম সহ বিভিন্ন জায়গায় প্ল্যান্ট রয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ রফতানিতে বিশ্ববাজারে সুনাম আছে এই ফার্মা সংস্থার।
ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড (Dr. Reddy’s Laboratories)
১৯৮৪ সালে কল্লাম আঞ্জি রেড্ডি এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থার সদর দফতর হায়দরাবাদে। ডায়াগনোস্টিক কিট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও ওষুধ তৈরির রাসায়নিক এবং বায়োটেকনোলজি প্রোডাক্ট উৎপাদনে ভারতের প্রথম সারির সংস্থা হল Dr. Reddy’s Laboratories।
গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (Glenmark Pharmaceuticals Ltd)
১৯৭৭ সালে তৈরি এই ফার্মা সংস্থার হেড অফিস মুম্বইয়ে। মূলত ভ্যাকসিন তৈরিতে এরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বেই উল্লেখযোগ্য। ভারত ছাড়া রাশিয়া, আফ্রিকায় এদের বড়ো বাজার রয়েছে।
লুপিন লিমিটেড (Lupin Ltd)
লুপিন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতার নাম দেশবন্ধু গুপ্ত। ১৯৬৮ সালে রাজস্থানের বিআইটিএস-পিলানি কলেজের অধ্যাপক গুপ্ত এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরও প্রধান কার্যালয় মুম্বইয়ে। জেনেটিক ও ব্র্যান্ডেড ড্রাগ তৈরিতে দেশের প্রথম সারির সংস্থা হল লুপিন। আমেরিকা, জাপানেও এই সংস্থার ব্যবসা ছড়িয়েছে।
সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (Sun Pharmaceutical Industries Ltd)
১৯৮৩ সালে দিলীপ সাঙ্গাভি মুম্বইয়ে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। রাজস্ব তৈরিতে দেশের অন্যতম এই ফার্মা কোম্পানি কার্ডিয়োলজি, নিউরোলজি, সাইকাট্রিক ট্রিটমেন্টের থেরাপির ওষুধ তৈরির জন্য বিখ্যাত।
টরেন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড (Torrent Pharmaceutical Ltd)
১৯৫৯ সালে শুরু হয় এই সংস্থার পথ চলা। প্রথমে এই সংস্থা ট্রিনিটি ল্যাবরেটরিজ নামে পরিচিত ছিল। পরে নাম বদল হয়। ৫০ টিরও বেশি দেশে ১০০০-এর বেশি প্রোডাক্ট রফতানি করে টরেন্ট।
ওকহার্ড লিমিটেড (Wockhardt Ltd)
১৯৬০ সালে হাবিল খোরাকিওয়ালার তৈরি এই ফার্মা ও বায়োটেক কোম্পানি দুনিয়াজুড়ে পরিচিত। মুম্বই থেকে কাজ করা Wockhardt এর উৎপাদিত ওষুধ আয়ারল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে রফতানি হয়।
ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ (Pharma Job Opportunity in India)
এক কথায় বললে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের চাহিদা বিপুল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, দুইভাবেই বিশাল কাজের বাজার রয়েছে ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে। এর মধ্যে কয়েকটি কাজের কথা বলতে গেলে ফার্মাসিস্ট, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, ফার্মাসিউটিক্যাল বোটানিস্ট, কেমিস্ট ইত্যাদি পদের কথা বলা যায়।
ফার্মাসিস্ট (Pharmacist)
ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার কর্মীর কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসেন ফার্মাসিস্টরা। একজন ফার্মাসিস্টকে জানতে হয় সব রকম ড্রাগের ঠিকুজিকোষ্ঠী, তার বর্তমান তথ্য ইত্যাদি।
সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (Pharma Sales Representative)
সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা ফার্মাসিতেও যেমন কাজ করতে পারেন, তেমনি তাঁদের কাজের সুযোগ আছে ফার্মা সংস্থাতেও। এঁরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সেলসের দিক দেখেন। কীভাবে আয় বাড়ানো যায়, পণ্যের রফতানি বাড়ানো যায়, বিমা ইত্যাদিতে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভের দায়িত্ব বিশাল।
ফার্মাসিউটিক্যাল বটানিস্ট (Pharmaceutical Botanist)
প্ল্যান্ট লাইফ থেকে কেমেস্ট্রি বা ড্রাগ কম্পাউন্ডিং-এর কাজে দক্ষ যিনি তাঁকে বলা হয় ফার্মাসিউটিক্যাল বটানিস্ট। ওষুধ তৈরিতে বিভিন্ন গাছগাছড়া নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হল এঁদের কাজ। কোনও রোগ নিরাময়কারী ওষুধ তৈরিতে এঁদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বটানির পড়ুয়ারা এই ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বেশি পান।
কেমিস্ট (Chemist)
ফার্মাসিউটিক্যাল বটানিস্টের মতোই কেমিস্ট-এর কাজ। বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষানিরীক্ষা করে তা থেকে ওষুধ তৈরিতে থাকে কেমিস্টের হাত। কেমিস্ট হতে গেলে রসায়ন বিষয়ে কলেজ ডিগ্রি থাকা প্রয়োজনীয়।
এছাড়া অ্যাটর্নি, ম্যানেজমেন্ট, রিসার্চার, টেস্টার, সিকিউরিটি পার্সোনাল, ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড টুল স্পেশ্যালিস্ট, ফেসিলিটি ম্যানেজার, ইঞ্জিনিয়ার, হিউম্যান রিসোর্স বা এইচআর, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে বিশাল কাজের সুযোগ রয়েছে Indian Pharmaceutical Industry তে। পদ ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতন-ও বেশ ভালো।
Comments are closed.