লকডাউনে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে সংক্রমিত করোনায়! নকল সচিন আইসোলেশন সেন্টারে বসে ভাবছেন, কীভাবে চলবে সংসার
হাতে হাত দিয়ে… আমি দেখি সে থরথর করে কাঁপছে!
দু’চোখে উত্তেজনা ভরে কথাগুলো বলে যান বছর পঞ্চাশের বলবীর চাঁদ।
যে ঘটনার কথা বলছেন সেটা ২০০৪। সিডনিতে মহাকাব্যিক দ্বিশতরান করেছেন সচিন। দেশে ফেরার পর সম্মান সংবর্ধনার পালা। কিন্তু সবকটিতে সচিনের পক্ষে হাজির থাকা অসম্ভব। হাজির হতেন চাঁদ।
দোকানের উদ্বোধন থেকে সিনেমার পর্দা, হোটেলের বিজ্ঞাপন থেকে পাড়ার বিচিত্রানুষ্ঠান, দশকের পর দশক ধরে সচিন সেজে আবির্ভূত হতেন চাঁদ। আসলি সচিন যখন বাইশ গজে, তখন ভক্তদের কাছে অবিকল সচিনকে ছোঁয়ার সুযোগ করে দিতেন বলবীর চাঁদ।
ছেলেবেলা থেকেই বম্বের সচিনের সঙ্গে পাঞ্জাবের চাঁদের মুখের, হাবভাবের বেজায় মিল। ব্যাপারটা আরও খোলতাই হয় এক মাথা ঝাঁকড়া চুল আসার পর। তারপর সচিন যেভাবে উন্নতির পালতোলা নৌকায় চেপে ক্রিকেটের সুরে মাতিয়েছেন দুনিয়া, সচিন সেজে স্টেজ, শ্যুটিং ফ্লোরে আলো ছড়িয়ে গিয়েছেন বলবীর চাঁদ। সবচেয়ে বড় কথা সচিনের জনপ্রিয়তার হাতেকলমে প্রমাণ পেয়েছেন বছরের পর বছর ধরে। সচিনকে ছুঁতে না পারা ভক্তকুল বলবীর চাঁদের সান্নিধ্য পেয়েছে।
তারপর আরব সাগরের পাড়ের শহরে বহু বদল এসেছে। এসেছে করোনাভাইরাস এবং তা রুখতে লকডাউন। হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের মতো চাকরি গিয়েছে বলবীর চাঁদেরও। মুম্বইয়ে সংসারের পাট তুলে শ্রমিক স্পেশাল ধরে ফিরতে হয়েছে পাঞ্জাবের সাহলো গ্রামে। এবং গিয়েই পরিবারসুদ্ধু সবাই করোনা সংক্রমিত। বর্তমানে গ্রামেরই এক আইসোলেশন সেন্টারে বসে জীবনটাকে অন্য খাতে বওয়ানোর স্বপ্ন দেখছেন সদ্য পঞ্চাশের অবিকল সচিন।
বলছেন, সচিন সাব আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। যা পেয়েছি সচিন সাবের কৃপাতেই। কিন্তু এখন যখন কাজ হারিয়ে গ্রামে বসে, তখন ভাবছি ওই ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজে কিছু করব। নকল না, নিজের হবে সেটা।
বিখ্যাত ফাস্ট ফুড জয়েন্ট গোলি বড়া পাওয়ে কাজ করতেন বলবীর চাঁদ। দীর্ঘদিনই মুম্বইয়ের বাসিন্দা। অতীতে বেশ কয়েকবার সচিনের সঙ্গে দেখাও হয়েছে। প্রথমবার চাঁদকে দেখার পর সচিনও নাকি বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে দু’জনের মাঝেমাঝেই দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। সচিন খেলা ছেড়েছেন। জনপ্রিয়তার ছেড়ে যাওয়া জুতোয় পা গলিয়েছেন নতুনেরা। আমদানিতে ভাঁটার টান লেগেছে চাঁদেরও। শ্যুটিংয়েও আর ডাক পড়ে না, পাড়ার অনুষ্ঠানের উদ্বোধনও এখন বিকল্পের সন্ধানে। সাকুল্যে ছিল চাকরিটি। লকডাউন যা ছিনিয়ে নিল।
সব মিলিয়ে ২২ বছর ধরে সচিন সত্ত্বা বয়ে নিয়ে গেছেন বলবীর চাঁদ। কত অটোগ্রাফ বিলিয়েছেন, মবড হয়েছেন সচিন ভক্তদের ভিড়ে, ছবি তুলেছেন, সম্মান পেয়েছেন অকাতরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সচিনের এই হামশকল ভালোবাসা পেয়েছেন প্রাণঢালা।
এখন কী করবেন? সংসার চলবে কীভাবে? আইসোলেশন সেন্টারে বসে বসেই আনমনা হয়ে যান সচিন তেণ্ডুলকরের ফটোকপি চাঁদ। গান লিখতে জানি। গান লিখে সুর দেবো। নিজে পারি তো ওই একটিই।
Comments are closed.