লকডাউনে সংকুচিত হয়েছে চাকরির বাজার, কিন্তু এরই মধ্যে কোন সেক্টরে নিয়োগ হচ্ছে? কোন ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে কাজ?
লকডাউন পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রুজি-রোজগার খুইয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কাজের এই আকালের সময় সবাই বিকল্প রোজগারের সন্ধানে। লকডাউন পরবর্তীতে ঠিক কোন জায়গায় বাড়ছে কাজ, কর্মসংস্থানের পরিস্থিতিই বা কেমন?
ই-কমার্স ও লজিস্টিক ক্ষেত্রে কাজ
অফিস পাড়ায় ফাস্টফুড দোকান খুলে থেকে যে ব্যক্তি মাসে ২০ হাজার টাকা রোজগার করতেন, তাঁকে সারা লকডাউন বাড়িতে বসে কাটাতে হয়েছে। এদিকে লকডাউন উঠলেও বাইরের খাবার এড়িয়ে চলেছেন বেশিরভাগ মানুষ। তাই এই ছোট ব্যবসায়ীদের খুঁজে নিতে হয়েছে বিকল্প রোজগার। এঁদের মধ্যে অনেকে এখন অনলাইন ডেলিভারি বয়ের কাজ করছেন। তাছাড়া লকডাউনে কাজ হারিয়ে যে পরিযায়ী শ্রমিক প্রায় শূন্য হাতে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁকেও নতুন কাজের দিশা দিচ্ছে ই-কমার্স সংস্থাগুলিই। লকডাউন পরবর্তী ভারতে বাড়ছে অনলাইন অর্ডারের সংখ্যা, বাড়ি বসে দরকারি জিনিসপত্র কিনে নিতে চাইছেন মানুষ। তাই লজিস্টিক ক্ষেত্রই এখন কাজহীন মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের ঠিকানা। আগের চাকরির তুলনায় বেতন কম হলেও সেই কাজ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
পুণের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে কাজ করা যে মেয়েটি মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পেতেন, লকডাউনের পর চাকরি হারিয়ে এখন কল সেন্টারে তাঁকে অর্ধেক পারিশ্রমিকে কাজ করতে হচ্ছে। তবে কোভিড-১৯ পরবর্তীতে বেকার থাকার চেয়ে স্বল্প বেতনে কাজ করাকে ঢের ভালো মনে করছেন অনেকে।
লকডাউনের পর যে যে জায়গায় কাজের সুযোগ বাড়ছে বা সুযোগ তৈরি হচ্ছে
লকডাউন সরিয়ে অফিস খুললেও, স্কুল-কলেজ আপাতত বন্ধ। পরবর্তী সময়ে তা খুললেও গত তিন মাসে অনলাইন ক্লাসের যে রমরমা শুরু হয়েছে তা কিন্তু জারি থাকবেই। তাছাড়া স্বাস্থ্য ক্ষেত্র, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার-কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজের নতুন করে কাজের বাজার তৈরি হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। লকডাউন পরবর্তীতে অফিসে শিফট ডিউটির জন্য সপ্তাহের অর্ধেক দিন বাড়ি থেকে কাজ করছেন অনেকে। যার ফলে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কিত কাজ বাড়ছে। বিভিন্ন সংস্থায় তৈরি হচ্ছে প্রশিক্ষিত সাইবার কর্মীর চাহিদা। কিন্তু সার্বিক কর্মসংস্থান কতটা তৈরি হচ্ছে? কাজ হারানো বিশাল সংখ্যক মানুষের কতজনকে কাজ দিতে পারবে এই কতিপয় সেক্টর বা কোম্পানি? সে প্রশ্নও তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে কাজের অবস্থা
জব সাইট Naukri.com-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় এ বছর মে মাসে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী নিয়োগ কমেছে গড়ে ৫০ শতাংশ। তাছাড়া হোটেল, পর্যটন ক্ষেত্র, বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে কর্মী নিয়োগ। সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকনমি জানাচ্ছে বেকারি ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে বেঙ্গালুরুর যে লজিস্টিক সেক্টরেই সব মিলিয়ে মাসে ১৪-১৫ হাজার মানুষ কাজ পেতেন সেটা এখন ঠেকেছে ৫ থেকে ৬ হাজারে।
Naukri.com ২১ জুন পর্যন্ত গত সাতদিনে দেশের কোম্পানিতে কর্মী নিয়োগের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১,৬৮০ টি কোম্পানি ১৯ হাজার ২০০ টি পদে কর্মী নিয়োগ করেছে।
তবে কোন ধরনের কর্মীর চাহিদা বেশি জানতে এই জব সাইট বেশ কয়েকটি ‘কিওয়ার্ড’ ব্যবহার করে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত মার্চ মাসের শেষ থেকে ‘ইনফর্মেশন সিকিউরিটি’, ‘নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি’ ইত্যাদি কাজে কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দুই ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১০০ ও ২২১ শতাংশ কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে গত তিন মাসে।
এছাড়া বিপিও, স্বাস্থ্যক্ষেত্র, ই-কমার্সে কর্মীর চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়ছে বলে জানাচ্ছে জব সাইট নকরি ডট কম।
তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মত, পদস্থ অফিসার পদ বা ‘ব্লু কলার’দের চাহিদা তেমন নেই। সে জায়গায় মোটামুটি ইংরেজি জানা, কম্পিউটারে দক্ষ, বারো ক্লাস পাশ বা গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েকেই বেশি নিয়োগ করছে বিভিন্ন সংস্থা। আবার লকডাউনের পর যে অফিসগুলি খুলছে তাতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে কাজ করানো হচ্ছে। সে সব জায়গায় সিকিউরিটি গার্ড, গাড়ি চালকের মতো কাজের জায়গাগুলি সংকুচিত হচ্ছে। আগের চেয়ে কম কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। তবে তাঁদেরও মত, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, ই-কমার্স- প্রধানত এই ক্ষেত্রগুলিই মূলত কর্মসংস্থানের দিশা দেখাবে এই অর্থনৈতিক মন্দার সময়।
Comments are closed.