কীভাবে রোগ প্রতিরোধ করে Lymphocytes/ T-Cell?

করোনা আবহে লিম্ফোসাইটস, টি-সেল ইত্যাদি নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন বিভিন্ন পথ্যের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির। কিন্তু কী এই lymphocytes এবং T-cells? এদের কাজ কী? করোনা সংক্রমিতের শরীরে এদের ভূমিকা কী?

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

how t cells can help fight corona

 

লিম্ফোসাইটস এবং টি সেল সম্বন্ধে জানার আগে জানতে হবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে। সহজ ভাষায় এরা অনেকটা সীমান্তের সৈন্যদলের মতো। শরীরের মধ্যে এদের কাজ দিনরাত পাহারাদারি করা। শত্রু দেখলেই দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে ঘায়েল করে ফেলা। কিন্তু যখন হেরে যায় তখনই অসুখ বিসুখ নাস্তানাবুদ করে শরীরকে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিক এমনই এক সেনাদল। এই ইমিউন সিস্টেম জোরদার হলে বহু দূরারোগ্য অসুখবিসুখকে অনায়াসে দূরে সরিয়ে রাখা যায়।

 

লিম্ফোসাইট কী? (What is Lymphocyte?)

t-lymphocytes immunity

 

লিম্ফোসাইট হল এক ধরনের শ্বেত রক্তকোষ (WBC)। এরা ইমিউন সিস্টেমের কোষ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। শরীরে প্রধানত দুই ধরনের লিম্ফোসাইট থাকে। একটি বি-কোষ এবং অন্যটি টি-কোষ।

রক্তে লিম্ফোসাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে তাকে লিম্ফোসাইটোসিস বলে। আর খুব কম লিম্ফোসাইট থাকাকে লিম্ফোপেনিয়া বলে। অস্থি মজ্জা স্টেম সেল থেকে উদ্ভূত হয় লিম্ফোসাইট।

T-lymphocyte বেশ পরিপক্ক। বিজ্ঞানের ভাষায় সংক্ষেপে লিম্ফোসাইট হল দানাবিহিন এক প্রকার অ্যাগ্রানুলোসাইট। এর সাইটোপ্লাজম দানাহীন। দেহের লিম্ফনোড, টনসিল, প্লিহা অংশে এরা তৈরি এই নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কনিকা। এরা দেহে অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডি শরীরে প্রবেশ করা রোগ জীবাণু ধংস করে। এভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে reactive lymphocytes.

করোনা আবহে প্রতিষেধক তৈরিতে বারবার উঠে আসছে টি-সেলের নাম। কিন্তু কী এই টি-সেল?

 

টিসেল কী? (What is T-cell?)

t cells for vaccine

 

টি-সেল হল এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ও তার (ইমিউন সিস্টেম) কার্যকলাপের অন্যতম অঙ্গ। এই টি-সেল শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণকে প্রতিহত করে আমাদের সুস্থ রাখে।

আবার বি-সেল শরীরে কোনও সংক্রমণ হলেই রক্তে ছুঁড়ে দেয় ক্ষেপণাস্ত্র। বিশেষ বিশেষ সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য থাকে বিশেষ বিশেষ প্রোটিন। আর টি-সেল ক্ষেপণাস্ত্র না ছুঁড়ে নিজেই এগিয়ে যায় শত্রুনিধনে। এক এক ধরনের টি-সেলের গায়ে লাগানো থাকে এক এক ধরনের চাবি। যার তালা থাকে ভাইরাস বা কোনও সংক্রমণে আক্রান্ত কোষগুলির গায়ে। টি-সেলগুলি তার চাবি নিয়ে চলে যায় সংক্রমণে আক্রান্ত কোষগুলির কাছে। তার গায়ে সেঁটে গিয়ে আক্রান্ত কোষের তালা বন্ধ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেই আক্রান্ত কোষে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়।

তারপর আক্রান্ত কোষটি মরে যায়। একই সঙ্গে বিক্রিয়া হয় তার গায়ে সেঁটে থাকা টি-সেলটির মধ্যেও। তাতে টি-সেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পরবর্তীতে ওই নির্দিষ্ট ভাইরাস ফের সংক্রমণ চালালে তা জোরালোভাবে প্রতিহত করে টি-সেল।

দেহে নানা ধরনের টি-সেল থাকে। তাদের গায়ে থাকে নানা রকমের চাবি। এই চাবিই টি-সেলের রিসেপ্টর।

 

করোনাভাইরাস টিসেল (Coronavirus and T-cells)

Coronavirus and T-cells

 

কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে থেকেই গবেষকরা রক্তের বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করে টি-সেলের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। কোনও রোগের সংক্রমণের কারণে রক্তে সৃষ্ট টি-সেল অনেক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। দেখা গিয়েছে, পরীক্ষায় একজনের দেহে হয়তো কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডি নেগেটিভ, কিন্তু টি-সেল পজিটিভ। এই টি-সেলই কোভিড- ১৯ কে সহজে ধ্বংস করতে পারে।

এ থেকে ধারণা করা যায়, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই কারও কারও দেহে কিছু মাত্রায় রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের টি-সেল অনেকের দেহে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

অবশ্য এটাও দেখা গেছে, সুনির্দিষ্ট T-cell থাকা সত্ত্বেও অনেকে করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর কারণ, কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে টি-সেলগুলো নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারে না। কেন পারে না তা নিয়ে আরও গবেষণা দরকার বলে মনে করেন গবেষকরা।

জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের শরীরে memory T-cells নামে রোগ প্রতিরোধী সেলের সংখ্যা থাকে খুবই কম। তাই ওষুধের সাহায্যে এই টি-সেলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় কি না সেটাই এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা আরেকটি আশার কথাও শুনিয়েছেন। সেটি হল, মৃদু উপসর্গ থাকা ব্যক্তির শরীরেও এমন টি-সেল এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে করোনার চরিত্র রোগীভেদে বদলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কতটা উপযোগী টি-সেল? গবেষকরা জানাচ্ছেন, যে সব রোগীর দেহে কাশি, জ্বরের মতো উপসর্গ আছে তাঁদের দেহে কার্যকর হবে টি-সেল। বাকিদের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রয়েছে তা নিয়ে এখনও পরীক্ষা চলছে।

Comments are closed.