বিহারের পশু খাদ্য মামলায় এক সময়ের অভিযুক্ত কলকাতার এক ব্যবসায়ী উধাও, সিবিআই অফিসারকে জেরা রাজ্য পুলিশের, চাঞ্চল্য
ওই ব্যবসায়ীর নাম দীপেশ চন্দক। তাঁর বিরুদ্ধে এক সময় বিহারের পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। সূত্রের খবর, সুনীল মিনা নামে সিবিআইয়ের এক সাব ইন্সপেক্টর গত ১৮ অগাস্ট ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হাওড়া থানায় এক অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, দীপেশ চন্দক নামের ওই ব্যবসায়ী ‘অসুস্থতা’র কথা বলে তাঁর চোখে ধূলো দিয়ে ১৭ ই অগাস্ট ফরশোর রোড থেকে পালিয়ে গেছেন। তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশ এই ঘটনায় ওই সিবিআই অফিসার সুনীল মিনাকে দু’বার জেরা করেছে। এবং তদন্তকারীদের প্রাথমিক দাবি, ঘটনার যে বিবরণ সুনীল মিনা পুলিশকে দিচ্ছেন, তা সম্পূর্ণ সত্যি নাও হতে পারে।
সিবিআই “হেফাজত” থেকে এভাবে এই ব্যবসায়ীর পালিয়ে যাওয়ায় শুধু মাত্র রাজ্য পুলিশেরই চোখ কপালে ওঠেনি, সিবিআইয়ের একটা অংশের তদন্তকারী অফিসাররাও এই ঘটনায় বিস্মিত। সূত্রের খবর, চন্দকের পালানোর এই ঘটনায় দুই প্রত্যক্ষদর্শীকে জেরা করেছে পুলিশ। তাঁরা পুলিশকে ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা ওই সিবিআই অফিসারের বয়ানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই ঘটনায় সিবিআই সাব ইন্সপেক্টরকে জেরার পাশাপাশি, পুলিশ ইতিমধ্যেই সিআরপিসি’র ১৬৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ওই দুই প্রত্যক্ষদর্শীর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। গত শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই বয়ান রেকর্ড করা হয়।
কে এই দীপেশ চন্দক ও তাঁর পালনোর ঘটনাটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
এই শিল্পপতি একদা আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। অভিযোগ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি হয়েছিল তাতে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা সরিয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী। সিবিআই ৫৫ টি কেসের বেশিরভাগেই তাঁর নাম দেয়। কিন্তু পরে সিবিআই নিজেই ‘অভিযুক্ত’র তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাঁর নাম ‘সাক্ষী’র তালিকায় ঢুকিয়ে দেয়। এই বছরের মার্চ মাসে বিশেষ সিবিআই কোর্টের বিচারক শিব পাল সিংহ সমন জারি করে দীপেশ চন্দককে দুমকা ট্রেজারি মামলায় আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন সিবিআইকে। আদালতে ‘সাক্ষী’ হিসাবে ওই ব্যবসায়ী জানান, তিনি মাল সরবরাহ না করেও বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়েছিলেন এই দুর্নীতির ঘটনায়। সেই সময় বিচারক জানিয়েছিলেন, যেভাবে সিবিআই তদন্তকারীরা ‘অভিযুক্ত’ থেকে এই ব্যবসায়ীকে ‘সাক্ষী’র তকমা দিয়েছেন তা বিস্ময়কর।
কারখানার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাই ১৭ তারিখ তিনি সেখানে যান। কাজ শেষের পর তাঁকে রাচি যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনে যেতে হয়। দীপেশ চন্দক নিজের গাড়িতে তাঁকে লিফট দেন স্টেশনে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। মিনা জানিয়েছেন, হাওড়ায় যাওয়ার রাস্তায় ‘অসুস্থতা’ বোধ করেন দীপেশ চন্দক। সেই সময় তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা একজন কনস্টেবলকে জল আনতে পাঠান ও নিজেও গাড়ি থেকে নেমে ওষুধ আনতে যান। কিন্তু ফিরে আসার পর তাঁরা চন্দক বা তাঁর ড্রাইভারকে খুঁজে পাননি। তাঁরা এই কেসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি নিয়ে পালিয়ে যান। মিনার দাবি, ঘটনাটি ঘটে ১৭ ই অগাস্ট রাত ৯ টা ৪৫ নাগাদ। যদিও তিনি অভিযোগ দায়ের করেন পরদিন বিকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে।
রাজ্যের তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানাচ্ছেন, যে অভিযোগ ওই সিবিআই আধিকারিক দায়ের করেছেন, তাতে অনেক ফাঁকফোঁকর রয়েছে। ওই সিবিআই অফিসার কেন নিজে ওষুধ আনতে ও কনস্টেবলকে জল আনতে পাঠালেন, তা তদন্তকারীদের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে না। যেখানে একজনই এই দুটি কাজ করতে পারতেন। কেন চন্দকের গাড়ির ড্রাইভারকেই বা এই কাজে পাঠানো হয়নি, তাও ভাবাচ্ছে পুলিশ আধিকারিকদের। জানা গেছে, সেদিন মিনা প্রথমে কলকাতায় চন্দকের বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তাঁকে না পেয়ে পরে হাওড়ায় তাঁর কারখানায় যান। চন্দকের গাড়িতে মিনার লিফট নেওয়ার বিষয়টি এবং এফআইআর করতে দেরি হওয়ার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের। মিনা কেন অভিযুক্তের গাড়িতে উঠতে রাজি হলেন, তাও পরিষ্কার নয়।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী নিজেদের বয়ান জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং মিনার কথায় অনেক অমিল রয়েছে। এবিষয়ে জানতে মিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি এবিষয় কথা বলতে চান না। তাঁকে যেন আর ফোন করা না হয়।
Comments are closed.