BJP MLA’দের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া অসাংবিধানিক! শাহের মন্ত্রককে তোপ প্রাক্তন আমলার

২০০ আসনের জন্য ঝাঁপিয়ে মিলেছে ৭৭। তার মধ্যে ২ বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন সাংসদ পদ ধরে রাখবেন বলে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে বাংলায় বিজেপির বিধায়ক ৭৫ জন। এবার তাঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। 

নির্বাচনী ভরাডুবির পর জয়ী বিধায়কদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রক। যা উস্কে দিয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। 

 

কী হয়েছিল? 

বাংলা দখলে মরিয়া বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অগুন্তি সভা সমাবেশ করে ২০০ আসনের দাবি পেশ করেছেন। কিন্তু ২ মে ফল বেরোলে দেখা যায় ৭৭ আসনে আটকে যাচ্ছে বিজেপি। এর মধ্যেই রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয় বিজেপি। রাজ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সমস্ত বিজেপি বিধায়কে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

 

বিতর্ক কেন? 

অমিত শাহের মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত উস্কে দিয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে তাহলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শুধুমাত্র ৭৭ জন বিজেপি বিধায়ককে একতরফা নিরাপত্তা দেয় কী করে? 

ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েটের প্রাক্তন বিশেষ সচিব ভাপ্পালা বালাচন্দ্রন দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অসাংবিধানিক এবং সপ্তম তফসিলের পরিপন্থী। 

 

আপত্তি কোথায়? 

প্রাক্তন স্পেশাল সেক্রেটারি ভাপ্পালা বালাচন্দ্রনের প্রশ্ন, কোন আইনের বলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা অস্ত্র বহন করবেন? সবচেয়ে বড় কথা, হামলার আশঙ্কা আছে সেটা কি বিধায়করা স্থানীয় থানায় জানিয়েছিলেন? কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের এমএলএকে এভাবে নিরাপত্তা দিতে পারে না, সাফ কথা বালাচন্দ্রনের। তাহলে তা রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ হয়, বলেন তিনি। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পুলিশ কোনও রাজ্যে ঢুকতে পারে কেবলমাত্র স্থানীয় পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে। সেই অনুমতি না নিয়ে এমন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। 

সাধারণত কাউকে সরকারি নিরাপত্তা দেওয়ার আগে থ্রেট পার্সেপশন পর্যালোচনা করা হয়। যদি দেখা যায় কোনও নির্দিষ্ট রাজনীতিবিদের উপর হামলার আশঙ্কা আছে তখন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। বালাচন্দ্রনের দাবি, সেই থ্রেট পার্সেপশন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনুক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, তাহলেই বোঝা যাবে এই সিদ্ধান্ত স্রেফ রাজনৈতিক কিনা।  

 

নিরাপত্তার আদল কেমন? 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সিআইএসএফকে ৬১ জন বিজেপি এমএলএকে এক্স ক্যাটেগরি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। অর্থাৎ সর্বক্ষণ এক একজন বিজেপি বিধায়কে ঘিরে থাকবেন ৩ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। এজন্য ১৮০ জন পার্সোনেলকে বাছাই করার প্রক্রিয়া চলছে বলে সিআইএসএফ সূত্রে খবর। 

 

রাজনৈতিক তাৎপর্য 

তৃণমূলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ তুলে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের কেন্দ্রীয় সুরক্ষা প্রদান করে মানুষের আরও দূরে চলে যাবে না তো বিজেপি? এমন প্রশ্নই করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় বিজেপির রাজনীতির ব্র্যান্ড গ্রহণ করেননি মানুষ। তার প্রমাণ ভোটের ফল। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুরক্ষা বলয়ের ঘেরাটোপে জনপ্রতিনিধি আটকে গেলে মানুষের মধ্যে যাবেন কী করে? তৃণমূলের দাবি, এভাবে ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে গিয়ে মানুষের আরও দূরে চলে যাওয়ার পাকা ব্যবস্থা করে ফেলেছেন অমিত শাহ। বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, বাংলার পরিস্থিতি এমন যে সেখানে তাদের বিধায়কদের নিরাপত্তা দিতেই হবে, না হলে প্রাণ সংশয়!

Comments are closed.