রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এনআরএসে ধুন্ধুমার, জুনিয়র চিকিৎসক প্রহৃত, বুধবার রাজ্যের সব হাসপাতালে আউটডোর বন্ধের ডাক
এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ (এনআরএস) হাসপাতালে।
রোগীর আত্মীয়দের হাতে প্রহৃত একাধিক জুনিয়র চিকিৎসক, যার মধ্যে এক জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারও সারাদিন তুমুল উত্তেজনা চলে এনআরএস হাসপাতালে। এদিন কর্মবিরতি পালন করে জুনিয়র চিকিৎসকরা। বুধবার রাজ্যের সব সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এনআরএস হাসপাতালে যান, তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। মেলেনি সমাধান সূত্র।
সূত্রের খবর, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে মহম্মদ সইফ নামে ট্যাংরা এলাকার এক বাসিন্দা সোমবার এনআরএসে ভর্তি হন। পরে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে এক জুনিয়র চিকিৎসককে শারীরিক হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও রোগীর পরিবারের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। পরে রোগীর আত্মীয়রা বাইর থেকে প্রায় একশো লোক এনে চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। দুই পক্ষের হাতাহাতিতে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় হাসপাতালে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি চালায় পুলিশ। ঘটনায় দুই জুনিয়র ডাক্তার জখম হন। তার মধ্যে একজনের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে, তাঁকে মৌলালির ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তাঁদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তার দাবিতে এনআরএস হাসপাতালের গেট বন্ধ করে মঙ্গলবার সকাল থেকে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার বিকেল অবধি এই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। এনআরএসে তো বটেই, জুনিয়র চিকিৎসকদের ডাকে রাজ্যের সমস্ত মেডিকেল কলেজে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় কয়েক ঘন্টার জন্য। জরুরি পরিষেবাও ব্যাহত হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন দূর দূরান্ত থেকে এনআরএসে আসা রোগী ও আত্মীয়রা। হাসপাতালের মেন গেট সহ অন্যান্য প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেন এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারেরা। রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, অ্যাম্বুলেন্সও আটকে দেওয়া হচ্ছে, এমনকী হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের সঙ্গে দেখাও করতে পারছেন না তাঁরা।
মঙ্গলবার দুপুরে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং পরে কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এনআরএসে গেলে, তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে, তাঁরা বসতে রাজি হননি। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
অন্যদিকে, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করতে পারলে আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানান জুনিয়র ডাক্তাররা।
Comments are closed.