দিল্লি দাঙ্গা ষড়যন্ত্র মামলা: ২০১৯ ভোটের ফলে মনে হিংসার উদ্রেক, উদ্দেশ্য নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করা, চার্জশিটে জানাল দিল্লি পুলিশ

“২০১৯ লোকসভার ফল প্রকাশের পরপরই হিংসা ছড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু, নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা ছিল মূল উদ্দেশ্য।” দিল্লি হিংসার চার্জশিটের ফাইনাল রিপোর্টে এমনই দাবি করেছে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। ২,৬৯৫ পাতার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন থেকেই দিল্লি হিংসা মামলার মূল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকাশ্য বক্তব্যের সুর ও অভিপ্রায় বদলে গিয়েছিল। হিংসার আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছিল।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসায় ১৫ জন আন্দোলনকারীকে অভিযুক্ত বলে চার্জশিটে দাবি করেছে দিল্লি পুলিশ। চার্জশিটে নাম রয়েছে আপ কাউন্সিলর তাহির হুসেন, পিঞ্জরা তোড়ের কর্মী দেবাঙ্গনা কলিতা ও নাতাশা নরওয়াল, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া গুলফিসা, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএচডি পড়ুয়া মিরান হায়দর এবং জামিয়া কোঅর্ডিনেশন কমিটির মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর সাফুরা- সহ অন্যান্যদের। স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদব, চিত্র পরিচালক রাহুল রায়, সাবা দেওয়ান, পিঞ্জরা তোড়ের কলিতা, নরওয়াল, সিপিআইয়ের অ্যানি রাজা, এমকেএসএসের রকসিতা স্বামী, সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার এবং অঞ্জলি ভরদ্বাজের মধ্যে কথোপকথনের ম্যানুস্ক্রিপ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে আড়াই হাজার পাতার চার্জশিটে। এছাড়া দিল্লি প্রোটেস্টস সাপোর্ট গ্রুপ (ডিপিএসজি) এবং ওয়ারিয়র্সের মতো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ট্রান্সক্রিপ্টও দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। যুক্ত করা হয়েছে তাদের কল ডিটেলসও।

ডিসিপি (স্পেশাল সেল) পিএস কুশবাহা ও এসিপি (স্পেশাল সেল) অলোক কুমারের সই করা চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সংজ্ঞায়িত হয় হিংসার দ্বারা সরকারকে রাজনৈতিক দাবি গ্রহণ করতে বাধ্য করলে। তারপর ইউএপিএ আইনের ১৫ নম্বর ধারা তুলে ধরে রিপোর্টে দেখানো হয়েছে ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’ এর সংজ্ঞা কী। চার্জশিটে লেখা হয়েছে, সরকারকে সিএএ ও এনআরসি প্রত্যাহার করতে হবে, আন্দোলনে এই দাবি তুলে আগ্নেয়াস্ত্র, পেট্রল বোমার ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে মারা গিয়েছেন এক পুলিশ কর্মী। এছাড়া অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য উপায়ে সরকারি ও বেসরকারী সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু এবং ৫০০’র বেশি ব্যক্তিকে গুরুতর আহত করার জন্য স্পষ্টতই এই ঘটনা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বলে সংজ্ঞায়িত হবে।

দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের চার্জশিটে আরও উল্লেখ, এমএসজে (জেএনইউ’র মুসলিম পড়ুয়াদের সংগঠন) নামে একটি দল গঠন থেকে এই ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক বিকাশ ঘটে। সিএবি-র পরে একটি অতি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বীজ বপন হয়। পরে জেসিসি গঠন এবং ডিপিএসজি-র উত্থান ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে নকশাল হিংসার রসদ সরবরাহ করেছিল। ভারত সরকারকে অমর্যাদাকর ভঙ্গিতে অপমান বা ব্যঙ্গ করা এবং সিএএ প্রত্যাহারের চাপ বৃদ্ধির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের সময়কে বেছে নিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা, রিপোর্টে দাবি দিল্লি পুলিশের।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এই প্রসঙ্গেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভীমা কোরেগাঁও মামলার কথা। ভারাভারা রাও, সুধা ভারদ্বাজ, সোমা সেন, ভার্নন গঞ্জালভেসদের বিরুদ্ধেও অন্তিম লক্ষ্য হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রসঙ্গ এনেছিল তদন্তকারী সংস্থা। এখনও পর্যন্ত মামলার যা গতিপ্রকৃতি তাতে সেই দাবি বিশেষ বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এবার দিল্লি দাঙ্গার তদন্তেও নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদের অন্তিম লক্ষ্যের কথা লিখে জানাল স্পেশাল সেল।

Comments are closed.