দিলীপ ঘোষ: মুকুল রায়ের থেকে নিশীথের গুরুত্ব বেশি, বৈশাখীর কব্জা থেকে বেরোতে না পারলে শোভনকে আমাদের কাজে লাগবে না

লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যে খবরের কেন্দ্রবিন্দুতে বিজেপি। ভোটের ফলকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বিজেপিতে দলত্যাগী তৃণমূল নেতাদের যোগদানের খবর, মুকুল রায়ের ভূমিকা, শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্ক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এনআরসি ইস্যু। সমস্ত ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

প্রশ্ন: লোকসভা ভোটের পর মুকুল রায়ের হাত ধরে একাধিক তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দিলেন। তাঁদের মধ্যে কাউকে নিয়ে বিতর্কও হল। মুকুল রায়ের এই ভূমিকা এবং তৃণমূলত্যাগী নেতাদের নিয়ে বিজেপির কতটা শক্তিবৃদ্ধি হল?

দিলীপ ঘোষ: মুকুল রায়ের কোনও কনট্রিবিউশন নেই, রেপুটেশন নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তব। কোনও সংগঠন বা কর্মী ওঁর সঙ্গে নেই। যাঁরা মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘোরে তাঁরাও সব দালাল, কাটমানি পার্টি। তাঁরা আমার সঙ্গেও ছবি তোলে অনেক সময়। আমাকে মুকুল রায় বলেছিল, ৫০ হাজার লোক নিয়ে আসবে, ৫০০ লোকও আনতে পারেনি। এঁরা পার্টিকে জিতিয়ে দেওয়ার মতো নয়।
তবে হ্যাঁ, যাঁরা এসেছে তাঁদের মধ্যে অ্যাসেট হিসেবে এসেছে অর্জুন সিংহ। চাপ নিয়ে জিতেছে। অর্জুন না থাকলে বারাকপুর আমরা জিততে পারতাম না। তবে পার্টি সিস্টেম মানে না, নিজের স্টাইলে চলে। কিন্তু মুকুলদার কোথাও কিছু নেই। মুকুল রায়ের থেকে নিশীথ প্রামাণিকের গুরুত্ব বেশি আছে।

প্রশ্ন: আর শোভন চট্টোপাধ্যায়? বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে শোভনকে নিয়ে এত বিতর্ক কেন?

দিলীপ ঘোষ: শোভন এখন জিরো হয়ে গেছে। নিজের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। বৈশাখী পুরো শোভনকে কব্জা করে নিয়েছে। বৈশাখীর কব্জা থেকে বেরোতে না পারলে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আমাদের কোনও কাজে লাগবে না।

প্রশ্ন: এই মুহূর্তে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এনআরসি। অসমে তুমুল বিতর্ক হচ্ছে, আপনাদের দলও বিরোধিতা করছে। এখানে আপনাদের অবস্থান তো এনআরসির পক্ষে!

দিলীপ ঘোষ: অসমে এনআরসি প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। অসমিয়া, বাঙালি, হিন্দু, মুসলমান, গোর্খা নানারকম বিষয় আছে। এখানে ব্যাপারটা সোজা। সবাই বাঙালি। আমরা এনআরসির দাবি জানিয়েছি। সেখান থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্নই নেই। বিজেপি ক্ষমতায় এলে নিশ্চিতভাবেই বাংলায় এনআরসি করবে।

প্রশ্ন: আপনাকে শেষ প্রশ্ন, দিলীপ ঘোষ কিছু বললেই বিতর্ক। আপনি সবসময় বিতর্কিত কথা বলেন। এই বিতর্কিত মন্তব্য কি সচেতনভাবে করেন?

দিলীপ ঘোষ: কিছুটা তো সচেতনভাবেই করি। আমার মিডিয়া সাপোর্ট দরকার আছে। বিতর্কিত কথা বলি বলে মিডিয়া দেখায়। আমি মিডিয়াতে থাকলে আমার পার্টিও থাকবে প্রচারের মধ্যে। তাছাড়া অনেক সময় সাধারণ লোকজন বিতর্ক এড়িয়ে চলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হলে বিতর্ক এড়িয়ে গেলে চলবে না। এককাট্টা হতে হবে।
এখানে যেমন কেউ অমর্ত্য সেন নিয়ে কিছু বলতেই ভয় পেতেন। আমি বললাম, দেখলাম অনেকেই আমাকে সমর্থন করছেন। এই যে গত কয়েক মাসে আমার গাড়িতে এত জায়গায় অ্যাটাক হয়েছে, গোলমাল হয়েছে, আমি চাইলে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা এড়িয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই সেগুলো এড়িয়ে যাইনি। গণ্ডগোল হয়েছে, মিডিয়া খবর করেছে। তাতে আমাদের সুবিধেই হয়েছে। বিতর্কের মধ্যে থাকলে প্রচার পাওয়া যায়, সেটা আমাদের দরকার আছে।

Comments are closed.