চলচ্চিত্র উৎসবে ডাক না পেয়ে ক্ষুব্ধ ধানকর রাজ্যের বিরুদ্ধে আনলেন ফোন ট্যাপিংয়ের অভিযোগ! উনি রাজভবনে রাজনীতি করছেন, পালটা তৃণমূল

ফের তীব্র হল রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সংঘাত। এবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ না পাওয়া এবং মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আড়িপাতা নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধানকরের নিশানায় রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে দিল তৃণমূলও।
কয়েকদিন আগেই কালীপুজো উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সস্ত্রীক তাঁর বাড়ি যান রাজ্যপাল। রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, যাদবপুর কাণ্ড, রাজ্যপালের ডাকা একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারের এবং শাসক দলের তরফে কোনও প্রতিনিধি না থাকায় রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা হয়তো ঘুচল এবার। কিন্তু ফের শাসক দলের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের মন্তব্যে শোনা গেল কটাক্ষের সুর। প্রতিক্রিয়া দিল শাসক দলও। সব মিলিয়ে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাতের আবহ বেড়েই চলেছে।
ইজরায়েলি স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে এ দেশের বিশিষ্টদের ফোন থেকে তথ্যচুরি ও আড়িপাতা নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে। এ নিয়ে গত শনিবার সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে আঙুল তুলে মমতা বলেন, বিরোধীদের গোপনীয়তার অধিকার আর সুরক্ষিত নয়। তিনি অভিযোগ করেন,তাঁর ফোনেও আড়িপাতা হয়েছে। ইজরায়েলের এনএসও সংস্থা আড়িপাতার ওই সফটওয়্যার কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে নাম না করে দুটি রাজ্যকেও নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, এর মধ্যে বিজেপি শাসিত একটি রাজ্যও আছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পাল্টা রবিবার রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া, ‘এখানেও (পশ্চিমবঙ্গে) ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে বলে আমার কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, তাঁর কাছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আমলা-নানা স্তরের অনেক মানুষ দেখা করতে আসেন। তাঁরাও তাঁর কাছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয় তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জির কটাক্ষ, রাজ্যপাল বিজেপির রাজ্য শাখার প্রধানের মতো কথা বলছেন। তাঁর অভিযোগ, যে কোনওভাবে রাজ্য সরকারকে বিব্রত করতে চাইছেন রাজ্যপাল।
এদিকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ না পেয়েও চটেছেন রাজ্যপাল । রাজভবনের বিজয়া সম্মিলনীতে রাজ্যপালের অনুযোগ ছিল, রাজ্য সরকারের কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয় না। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হল কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। রবিবার রাজ্যপালের কটাক্ষ, চলচ্চিত্র উৎসবে বিশ্বের নানা দেশ থেকে মানুষ আসবেন। অথচ আপনাদের রাজ্যপালই সেখানে আমন্ত্রিত নয়।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যপালকে চলচ্চিত্র উৎসবে ডাকার কোনও রেওয়াজই নেই। নবান্নের দাবি, চলচ্চিত্র উৎসব কোনও সরকারি অনুষ্ঠান নয়। সরকার কেবল পরিকাঠামোগত সহায়তা দেয় উৎসব কমিটিকে। রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই ধানকারের সঙ্গে সরকারের বিরোধ লেগেই রয়েছে নানা ইস্যুতে। গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হওয়া এবং চলচ্চিত্র উৎসবে ডাক না পাওয়াকে ঘিরে বিতর্ক সেই বিরোধের সাম্প্রতিক নজির।

 

Comments are closed.