গাফিলতিতে রোগী মৃত্যু, শিলিগুড়ির আনন্দলোক হাসপাতালকে জরিমানা স্বাস্থ্য কমিশনের, বেলভিউয়ের হলফনামা তলব

রোগী মৃত্যু, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, জোর করে রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করার মতো নানা মামলায় একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে রায়দান করল স্বাস্থ্য কমিশন। কোথাও হাসপাতালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আবার কোথাও স্রেফ সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হল।

চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুতে শিলিগুড়ির আনন্দলোক হাসপাতালকে জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য কমিশন। এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিকের মৃত্যুতে শিলিগুড়ির এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলা হয়। দেবল রায় (৬৪) নামে প্রাক্তন ব্যাঙ্ক আধিকারিকের পরিবারের অভিযোগ, গত ২৮ অগাস্ট শিলিগুড়ির আনন্দলোক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দেবলবাবুকে। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে আইসিইউ বেড দেওয়া হয়নি। এর অনেক পরে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হলে সেখানে দেবল বাবুর মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য কমিশন।

সোমবার বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার শুনানি করে স্বাস্থ্য কমিশন। মামলাগুলির রায়দান করেন কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার ব্যানার্জি।

২০১৯ সালের অপর এক মামলায় আবার জরিমানা করা হয়েছে সল্টলেকের আনন্দলোক হাসপাতালকেও। সেখানে রোগীর ডানদিকের বদলে বামদিকের হার্নিয়া অপারেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। রোগী অভিযোগ করেন, বর্তমানে তিনি শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দেবে বলে জানায়। পাশাপাশি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সল্টলেকের আনন্দলোক হাসপাতালের হলফনামাও তলব করেছে কমিশন।

সল্টলেকের আর একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক রোগিণীর চিকিৎসায় গাফিলতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে কমিশন।

এছাড়া ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে এক রোগীর চিকিৎসায় ১৩ লক্ষ টাকার বিল হয়েছিল। ঘটনাচক্রে সেই রোগীর মৃত্যু হয়। বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বিলের অঙ্ক খতিয়ে দেখে মনে হয়েছে এতে অতিরিক্ত খরচ চাপানো হয়েছে। এরপরই কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বকেয়া ২ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকার মধ্যে দেড় লক্ষ টাকা মুকুব করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট মামলা নিয়ে সোমবার জট বেঁধে যায়।

অন্যদিকে বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা করে ছুটি পাওয়ার পরও রোগীর কাছ থেকে এক চিকিৎসক এক লক্ষ টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। ঘটনায় হাসপাতালের হলফনামা চেয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন।

দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালকে রোগীর কাউন্সেলিং না করিয়ে দামি পরীক্ষা করানো এবং অতিরিক্ত একদিন আইসিইউতে রাখার মূল্য হিসেবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।

৩ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা বিল না মেটানোয় এক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগিণীর দেহ ২১ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে কমিশন। সব মিলিয়ে সোমবার কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার রায় দেয় স্বাস্থ্য কমিশন।

Comments are closed.