রবিবার বিকেলেই খবর পাওয়া গিয়েছে করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘটনাচক্রে একই দিনে জানা গেল, তাঁর মন্ত্রক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের রুল ফ্রেম করতে আরও ৩ মাস সময় চেয়েছে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর ৬ মাসের মধ্যে কোনও আইনের রুল ফ্রেম করে ফেলতে হয়। গত বছর ১২ ডিসেম্বর সই করেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। নির্ধারিত ৬ মাস শেষ হয়েছে এ বছর ১২ জুন।
সিএএ নিয়ে কম বিক্ষোভ দেখেনি দেশ। কিন্তু সংসদের দুই কক্ষে পাশ করিয়ে, রাষ্ট্রপতির সাক্ষর নিয়ে দ্রুত আইন করে ফেলতে চেষ্টার কসুর করেনি মোদী সরকারও। আর এই প্রক্রিয়ার পুরোভাগে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করে পথে নামে দেশের একাংশ। সমর্থন জানিয়ে পাল্টা পথে নামেন শাসক পক্ষের লোকেরা। গোটা দেশে কার্যত অশান্তির আগুন জ্বলে।
আইনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্থান থেকে যে সমস্ত অমুসলিম মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে চাইবেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, এনআরসির সঙ্গে সিএএকে জুড়ে দিয়ে আসলে দেশের মুসলিমদের উপর রাষ্ট্রীয় অত্যাচার নামিয়ে আনার পোক্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শাহিন বাগের ধাঁচে গোটা দেশে গড়ে ওঠে প্রতিবাদ মঞ্চ। আমরা সবাই নাগরিক, এই স্লোগান দিয়ে পথে নামেন তৃণমূলনেত্রী। পিছনে ছিলেন বাংলার বিশিষ্ট নাগরিক থেকে শুরু করে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। গোটা দেশেই পথে নামতে শুরু করেন বিশিষ্টরা। বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার হন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। উত্তরপ্রদেশে পুলিশ গুলি চালায়। এত কিছু সত্ত্বেও সিএএ নিয়ে দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছিলেন অমিত শাহ। বাংলায় এসে বুঝিয়েছেন ক্রোনোলজি। পিছু হঠার যে প্রশ্ন নেই, বারবার বলেছেন সে কথা।
এই পর্যায়ে শাহ প্রথম ধাক্কা খান উপনির্বাচনের ফলে। যে বাংলায় লোকসভা ভোটে বিপুল এগিয়ে শেষ করেছে বিজেপি, সেই এলাকাতেই বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের কাছে বিরাট ধাক্কা খায় গেরুয়া শিবির। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া বিধানসভা আসনে, বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকা বিজেপি প্রার্থী পর্যুদস্ত হন তৃণমূলের কাছে। বিজেপির এক প্রার্থী স্বীকার করে নেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি তাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে থমকানোর কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি। কিন্তু আইন প্রণয়নের কাজ যে কিছুই এগোয়নি, তা অতিরিক্ত সময় চাওয়াতেই স্পষ্ট।
গত বছর ১২ ডিসেম্বর আইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নাগরিকত্ব সংশোধনী। নিয়ম অনুযায়ী, আইন জারির মুহূর্ত থেকে ৬ মাসের মধ্যে আইনের রুল ফ্রেম শেষ করে ফেলতে হবে। যদি কোনও কারণে তা সম্ভব না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে অতিরিক্ত সময়ের আবেদন করা যাবে। ৩ মাসের বেশি অতিরিক্ত সময় এক দফায় দেওয়া যাবে না।
১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের হস্তাক্ষরে সিএএ আইনে পরিণত হওয়ার পর ৬ মাস শেষ হয় এ বছরের ১২ জুন। সূত্রের খবর, মে মাসের শেষদিকে স্ট্যান্ডিং কমিটির এই সংক্রান্ত প্যানেল কাজ কতদূর এগিয়েছে তার খোঁজ নিয়েছিল। তাঁরা জানতে পারেন, রুল ফ্রেমিংয়ের কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। তারপরই অমিত শাহের মন্ত্রক আরও সময় প্রার্থনা করে। তাদের অতিরিক্ত ৩ মাস সময় মঞ্জুর করা হয়েছে বলে খবর।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, সিএএ নিয়ে মোদী সরকারের পরিকল্পনা কী? রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হিসেবে খাতায় কলমেই কি থেকে যাবে বিতর্কিত এই আইন, নাকি করোনা পর্ব মেটার অপেক্ষা?
Comments are closed.