তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার ভার আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এএআই) বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করল কেরল সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থাকে বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণের ভার দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রথম থেকেই তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে কেরলের বাম সরকার। এ নিয়ে কেরল হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। কিন্তু আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এই মামলায় হাইকোর্ট জানায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যেকার বিতর্ক, তাই একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই সংবিধানের ১৩১ ধারায় এর ন্যায়বিচার করতে পারে। এরপরেই বুধবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে পিনারাই বিজয়নের সরকার। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে।
আরও জানতে ক্লিক করুন, কয়লা সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১৩১ ধারা অনুযায়ী, কোনও দুই রাজ্যের মধ্যে সংঘাত কিংবা কেন্দ্র-রাজ্য বিতর্কের বিচার একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই করতে পারে। কেরল সরকার হাইকোর্টে সওয়াল করে, সংবিধানের ১৩১ ধারা এই প্রেক্ষিতে প্রয়োগ করা যায় না। কারণ, আদানি এন্টারপ্রাইজ হল একটি বেসরকারি সংস্থা এবং এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এএআই), যারা এই মামলার উত্তরদাতা তাদেরও রাজ্য হিসেবে ধরা যায় না। পাশাপাশি, আদানি গোষ্ঠীর থেকে কেরল স্টেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজ আরও সুলভে করতে পারবে বলে দাবি করা হয়। শেষ পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর হাত থেকে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজ নিতে কেন্দ্র ও এএআইকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেই যেতে হল কেরল সরকারকে।
আরও জানতে ক্লিক করুন, এবার কার্বাইন মেশিগান বানাবে আদানি গোষ্ঠী! গোয়ালিয়রে কিনল অস্ত্র কারখানা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচটি বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের বরাত পায় গৌতম আদানির সংস্থা। তার মধ্যে একটি হল তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দর এবং যার বেসরকারিকরণের প্রস্তাব দিয়েছিল মোদী সরকার।
আদানি গোষ্ঠীর হাতে এই বরাত যাওয়ার পর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তার বিরোধিতা করে কেরল সরকার। তাদের অভিযোগ, নিয়মমাফিক নিলাম হয়নি এবং বেসরকারি সংস্থাটি বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় দক্ষ নয়। হাইকোর্টেও কেরল সরকার জানায়, বিমানবন্দর পরিচালনায় আদানিদের কোনও পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই এবং চুক্তির সিদ্ধান্ত জনস্বার্থের কথা ভেবে হয়নি। পাশাপাশি, এই চুক্তির ফলে ১৯৯৪ সালের এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, রাজ্য সরকারের জমি মালিকানা সংক্রান্ত অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা।
আদালতে কেরল সরকার জানায়, বিমানবন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের সরকারি সংস্থা অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং কার্যকরী। উদাহরণ দিয়ে তারা জানায়, সরকারি সংস্থার হাতে থাকা কোচি বিমানবন্দরটি বিশ্বজনীন পরিচিতি পেয়েছে। তাছাড়া বিশাল লাভও করেছে তারা। তা হলে কেন পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা আদানি গোষ্ঠীর হাতে বিমান পরিচালনার দায়িত্ব ছাড়া হবে, প্রশ্ন তোলে কেরল সরকার।
Comments are closed.