কৃষি বিল, নয়া ছাঁটাই নীতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক মমতার, বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে বললেন বিজেপির বিরুদ্ধে
কৃষক ও খেত মজুরদের সমস্ত অধিকার কেড়ে ভুঁইফোড় ও জোতদারদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাজ্যসভায় কৃষক বিল পাশ করাকে ইতিহাসের ‘ব্ল্যাক সানডে’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে থেকে কৃষি বিল পাশ নিয়ে মমতা বলেন, কোনও নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। রাজ্য সরকারগুলির সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হিটলারি শাসনের মতো দেশ চালাচ্ছে বিজেপি। রাজ্য তথা দেশবাসীকে এই বিলের বিরোধিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে আন্দোলন। তাঁর ঘোষণা, মোদী সরকারের কৃষি সংস্কারের দুই বিল এবং বেসরকারি সংস্থায় কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাই সংক্রান্ত তিনটি বিলের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরনা দেবে। এরপর মঙ্গল ও বুধবার যথাক্রমে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন এবং কৃষক সংগঠন পথে নামছে। কৃষি বিল নিয়ে এদিন মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বলেন, এই ঘটনা দেশকে আরও একটা মন্বন্তরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
রবিবার রাজ্যসভায় কৃষি বিল পাশ ঘিরে তুলকালাম হয়। যার জেরে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন সহ আট সাংসদকে সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সেই সঙ্গে নিন্দা প্রস্তাবও আনা হয়েছে। এ নিয়ে মমতার প্রতিক্রিয়া, জনতার কাজ করতে গিয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাচ্ছেন বিরোধী সাংসদরা! বিজেপি ক্ষমতার জোরে যা ইচ্ছে তাই করছে এবং ভুঁইফোড়, জোতদারদের জমি পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছে। তিনি আরও বলেন, এই বিলের বিরুদ্ধে সংসদের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সাসপেন্ড ৮ সাংসদ-সহ বিরোধীরা। সোমবার সারা রাতভর চলবে অবস্থান। মঙ্গলবার সকালে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন তাঁরা।
দিল্লির পাশাপাশি রাজ্যেও কৃষি বিলের বিরোধিতায় আন্দোলনের ডাক দেন তৃণমূল নেত্রী। তবে করোনা সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরপর দলের অন্য শাখার নেতা-কর্মীরাও এ নিয়ে কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য তথা দেশের সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কটাক্ষ, দেশের লজ্জা বিজেপি। যে কায়দায় দেশ চালানো হচ্ছে তা নিন্দনীয়। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাঁর নাম দাঙ্গায় জড়ানো হচ্ছে। দিল্লি হিংসা মামলায় যোগেন্দ্র যাদব ও সীতারাম ইয়েচুরির নাম যোগ করার প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, মতাদর্শগত বিভেদ থাকলেও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কেন ‘আসল’ দাঙ্গাবাজদের ধরা হচ্ছে না সেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি। মমতার কথায়, একটা ভালো কাজ করতে পারেনি বিজেপি। কেবল ভোট এলে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো আর অন্য সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও এক শ্রেণির মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে অপপ্রচার, কুৎসা ছড়ানোই তাদের কাজ। তাই কৃষক ও শ্রমিক স্বার্থে দল, মত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে বিজেপি সরকারের বিরোধিতা করার আহ্বান জানান তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
Comments are closed.