Nirbhaya: ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে, ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়, কয়েকদিন খেতে পারিনি, বললেন নাটা মল্লিকের ছেলে মহাদেব
২০ মার্চ ফাঁসি হওয়ার কথা দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের। গত কয়েক মাসে আস্তে আস্তে অপরাধীদের সামনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিচার ব্যবস্থার একের পর এক দরজা।
তিহাড় জেলে ফাঁসির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মেরঠ থেকে তিহাড়ে পৌঁছে গিয়েছেন ফাঁসুড়ে পবন জল্লাদ।
পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ফাঁসুড়ে মহাদেব মল্লিকের ইচ্ছে ছিল, তিনিই এই চারজনকে ফাঁসি দেবেন। কিন্তু তিহাড়ে তাঁর ডাক পড়েনি। তবু মহাদেব ওই চারজনের ফাঁসি সংক্রান্ত সব খবররাখবর রাখছেন। রাজ্যে একমাত্র ফাঁসুড়ে ছিলেন মহাদেবের বাবা প্রয়াত নাটা মল্লিক। মহাদেব আজ পর্যন্ত কাউকে ফাঁসি দেননি বটে, তবে বেশ কয়েক বছর আগে কিশোরী হেতাল পারেখের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত ধনঞ্জয় চ্যাটার্জিকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি দেওয়ার সময় তিনি বাবা নাটা মল্লিককে ‘সাথ’ দিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা তিনি এখনও ভুলতে পারেননি মহাদেব। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির আগে পরে মিলিয়ে কয়েক দিন বাবার মধ্যে যে অস্থির টানাপড়েন চলেছিল, তার সাক্ষী নাটার ছোট ছেলে মহাদেব। টালিগঞ্জের বাড়িতে বসে মহাদেবের সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল।
আরও জানতে ক্লিক করুন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কোন দেশে, ভারতের স্থান কত?
মহাদেব বলছিলেন, ধনঞ্জয়ের ফাঁসির আগে বাবা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জেলের তিন-তিনজন ডাক্তার এসে বাবাকে দেখে যান। জেলের সুপার জানতে চেয়েছিলেন, তিনি যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হবে কেমন করে? বাবা বলেছিলেন, কেন? আমার ছোট ছেলে আছে। ও দিয়ে দেবে। আপনাকে কিচ্ছু চিন্তা করতে হবে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মহাদেবকে দিতে হয়নি ফাঁসি। হাতলটি টেনেছিলেন নাটা নিজেই। তবে ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পর বাবা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন। ব্লাড প্রেশার বেশ বেড়ে গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ফাঁসির হাতল টানার পরের কথা বলছিলেন মহাদেব। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির আগেও বাবা নাটা মল্লিকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কেমন ভাবে হাতল টানতে হয়, বাবা হাতে ধরে তাঁকে শিখিয়েছেন। মহাদেবের কথায়, হাতল টানার পর দুম করে এক কান ফাটানো আওয়াজ হয়। ওই আওয়াজে মনে হয়, বুকটা যেন ফেটে গেল। মনে হয়, এ কী করলাম আমি? আমি নিজের হাতে হাতল টানিনি। তবু আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। মহাদেব জানান, ওই ঘটনার পর তিনি বেশ কয়েকদিন খাওয়া-দাওয়া করতে পারেননি। সারাদিন গুম হয়ে বসে থাকতেন। বাবাও মনমরা হয়ে থাকতেন। দেখে খুব খারাপ লাগত।
আরও জানতে ক্লিক করুন, ফাঁসির আগের রাতে কী হয় জেলে?
নাটার ছেলে বলেন, হাতল টানার পর পাটাতনের একদম ভিতরে ঢুকে যায় আসামী। উপর থেকে কিছুই দেখা যায় না। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষার পর যখন শরীরের কাঁপুনি বন্ধ হয়, তখন আমরা ডাক্তার ও জেল আধিকারিকদের খবর পাঠাই। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করেন। তারপর দেহটি নামানো হয়। পাঠানো হয় ময়না তদন্তে। জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেন। মহাদেব জানান, যেদিন ফাঁসির পরোয়ানা জারি হয়, সেদিন থেকে ফাঁসির দিন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। বাড়ির সামনে পুলিশ পোস্টিং থাকে। এই ক’দিন সব সময় তাঁদের সঙ্গে একজন করে দেহরক্ষী দেওয়া হয়।
আরও জানতে ক্লিক করুন, নির্ভয়াকাণ্ড নিয়ে তিহারের প্রাক্তন সুপার সুনীল গুপ্তাকে কী বলেছিল দোষী মুকেশ?
মহাদেব শুনেছেন, মেরঠের ফাঁসুড়ে পবন নাকি সহকারী নেবেন না। তিনি কিছুটা অবাকই হয়েছেন। মহাদেব বললেন, সেটা কী করে সম্ভব? ফাঁসি দেওয়ার সময় একজনকে হালকা করে আসামীকে ধরে রাখতে হয়। কারণ সে যদি ভয় পেয়ে বসে পড়ে, তা হলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। যাই হোক, সেটা পবনের আর জেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।
Comments are closed.