বর্ষায় করোনা প্রকোপ বাড়বে না কমবে? বৃষ্টিতে কি ভাইরাস সংক্রমণ কমে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

করোনাভাইরাস, দুনিয়া জুড়ে যার তাণ্ডবে ত্রস্ত মানব সভ্যতা, তার চরিত্র, গঠন ইত্যাদি নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। চলছে প্রতিষেধকের খোঁজ। এর মধ্যে নতুন যে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তা হল, দেশে বর্ষার মরসুমে এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপ কি কমতে পারে? না বৃদ্ধি পাবে?
কয়েকমাস আগে করোনাভাইরাস যখন মহামারির আকার নিচ্ছিল, তখন তাপমাত্রার সঙ্গে এই ভাইরাসের সম্পর্ক নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠে এসেছিল। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, গ্রীষ্মপ্রধান দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে। গ্রীষ্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দেশেই এই ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণ কমবে বলে মত দেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। কিন্তু খাতায়-কলমে তা হয়নি।
দিন গড়িয়েছে। সময় মতো বর্ষা এসেছে দেশে। এখন এই ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণ কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা।
যেহেতু নোভেল করোনাভাইরাস একেবারে নতুন একটা ভাইরাস, তাই বৃষ্টি-বাদলা পরিবেশে এর প্রভাব ও বিস্তার কী হতে পারে, তা নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। এই অবস্থায় অন্যান্য ভাইরাসের চরিত্র বর্ষায় কেমন হয়, তার সঙ্গে তুলনা টেনে নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে একটা ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বর্ষায় বিভিন্ন ভাইরাসের প্রভাব এবং করোনা

বর্ষাকালে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়ার মতো ভেক্টর বর্ন ডিজিসের প্রাদুর্ভাব হয়। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মশার বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর মতোই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চরিত্র ভেক্টর বর্ন ডিজিসের থেকে আলাদা।
এই বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিজের মত জানিয়েছেন বেলজিয়ামের ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর তথা আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের প্রাক্তন চিকিৎসক, এপিডোমায়োলজিস্ট মার্ক অ্যালেন উইডোসন। তিনি জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জা হোক বা অন্য কোনও ভাইরাল রেসিপিরেটরি ডিজিসের ঋতুকালীন চরিত্র পুরোপুরি বোঝা যায় না।
তাঁর কথায়, আমেরিকার কথা ধরলে, সেখানে ফ্লুয়ের কোনও মরসুম ধরা মুশকিলের। তাপমাত্রা, বৃষ্টির মতো যে কোনও একটা ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে না ভাইরাসের চরিত্র। অথবা, ঘরবন্দি থেকেও এই সব ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। তবে সূর্যের আলো এবং মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি অনেক ভাইরাসেরই ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারে বলে জানান তিনি।
আবার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর চিকিৎসক এম এস চাড্ডার কথায়, করোনাভাইরাস বিভিন্ন মরসুমে কীভাবে বিস্তার লাভ করে তা বুঝতে আরও কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। দীর্ঘ সময় কোভিড -১৯ এর ছড়িয়ে পড়া, এর চরিত্র বদল এবং ঋতুভেদে সংক্রমণ মাত্রার দিকে নজর রেখে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে জানান তিনি।

 

ঋতু পরিবর্তন ও মানুষের ব্যবহারিক পরিবর্তন

মুম্বইয়ের সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন বেসিক সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী শুভজিৎ সেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, ভাইরাল অসুখের বিস্তার তিনটি প্রধান কারণের উপর নির্ভর করে। সেটা হল, পরিবেশের পরিবর্তন (তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সূর্যালোক), মানুষের আচরণগত পরিবর্তন এবং ভাইরাসের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য। ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে, এর সংক্রমণ শক্তি-প্যাথোজেনসিটি এবং তার বেঁচে থাকার মেয়াদ।
তিনি জানান, বর্ষায় কোনও ভাইরাসঘটিত রোগ কীভাবে ছড়ায় তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এইসব বিষয়গুলি। বর্ষায় সংক্রমণ হার কীভাবে কমতে পারে তার একটা উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, রাস্তায় থুতু ফেলা একটি সাধারণ সমস্যা, যা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আশা করা যায়, বৃষ্টির ফলে রাস্তা ধুয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাসও ধুয়েমুছে যাবে। আবার, বৃষ্টির দিনে সাধারণত মানুষ ঘরবাড়ি বা অফিসের মতো বন্ধ জায়গায় বেশি সময় ব্যয় করেন। দোকান, বাজার ইত্যাদি যে সব জায়গায় মানুষের জড়ো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানেও বর্ষার সময় ভিড় অনেক কম হয়। এসব বিষয়ও করোনা সংক্রমণ রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞানী শুভজিৎ সেন।

Comments are closed.