বছর শেষে দৈনিক ১২ হাজার মৃত্যু কোভিড সৃষ্ট ক্ষুধায়! বিশ্বজুড়ে করোনার এর চেয়েও বেশি প্রাণ কাড়তে পারে খিদে: অক্সফাম

খিদে কোনও রোগ নয়। কিন্তু অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমরা কি অতিমারির ভয়াবহতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে এমন ক্ষুধার রাজ্যে প্রবেশ করতে চলেছি? রোগে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে রোজ। কিন্তু জানেন কি, অতিমারি যত মানুষের প্রাণ কাড়ছে, তার চেয়েও ঢের বেশি মানুষের প্রাণ যেতে চলেছে ক্ষুধায়? অক্সফামের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ভয়াবহ ইঙ্গিত। বলা হচ্ছে, এ বছর শেষ হতে হতে দৈনিক ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে থাকবে করোনা পরিস্থিতির জেরে সৃষ্টি হওয়া খিদেয়।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, এ যাবত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৮,৮৯০ জনের। দিনটি ছিল ১৭ এপ্রিল। কিন্তু অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, ২০২০ শেষ হতে হতে দিনে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে। রোগে নয়, স্রেফ পেটের খিদেয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত অক্সফামের রিপোর্টে খিদের হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে সারা বিশ্বের ১০ টি জায়গাকে। যেখানে দারিদ্র বেশি। আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ পড়ছে এই হটস্পটে। এই সমস্ত অঞ্চলে মানুষের জীবনযাত্রায় এর কীরকম প্রভাব পড়তে চলেছে তা সহজেই বোঝা যায়।

তারপরেই আছে মিডল ইনকাম কান্ট্রি বা মধ্য আয়ের দেশ সমূহ। তাতে আছে ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো। করোনা আসার বহু আগে থেকেই এখানকার প্রান্তিক মানুষের হাতে খাদ্যের যোগান কম। তার উপর করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে লকডাউন জারি হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভারতের মতো ভয়াবহ আর্থিক বৈষম্য সম্পন্ন দেশে লকডাউনের জেরে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন দলিত তফশিলি জাতি, জনজাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সর্বোপরি মহিলা ও শিশুরা। অর্থাৎ খিদের মারের উপর করোনা সৃষ্ট ক্ষুধার দ্বিগুণ জ্বালা। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ৪ ঘণ্টার নোটিসে লক়ডাউন জারির ফলে অরণ্যের উপর যে সমস্ত সম্প্রদায় নির্ভরশীল, তাদের কোমর ভেঙে গিয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের তথ্য তুলে ধরে অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে বিশ্বে ৮২১ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন= ১০ লক্ষ) মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তা বা নিরাপত্তা নেই এবং তার মধ্যে ১৪৯ (১ মিলিয়ন= ১০ লক্ষ) মিলিয়ন মানুষের প্রকৃত অর্থেই কোনও খাদ্যের যোগান নেই। রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে সেই চরম অনিরাপদ অংশ বেড়ে হয়ে যেতে চলেছে ২৭০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন= ১০ লক্ষ)। পাটিগণিতের হিসেবে গত বছরের চেয়ে ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি!

তাহলে কী উপায়? অক্সফামের রিপোর্টে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে সরকারগুলোকে ক্ষুধা মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নামতে হবে। প্রতিটি মানুষের পেটে খাওয়ার পৌঁছনোই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু এ জন্য দরকার বিপুল অর্থের। তা কী করে জোগাড় হবে? অক্সফামের চিফ এক্সিকিউটিভ ড্যানি স্রিসকান্দারাজাহের পরামর্শ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান যারা দেশে দেশে ঋণ দেওয়ার কাজে যুক্ত, বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া দেশকে দেওয়া ঋণ মকুব করতে হবে। তাতে সেই দেশগুলোর হাতে মানুষের খিদে মেটানোর জন্য অতিরিক্ত টাকার যোগান আসবে। একইভাবে সেই দেশগুলোকেও এরকমই বিভিন্ন ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দিতে হবে।

Comments are closed.