‘মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করি, মুসলিম বলেই করা হচ্ছে হেনস্থা’, জেএনইউয়ের অধ্যাপিকার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, নোটিস বিশ্ববিদ্যালয়কে
দোষ কেবল, তিনি মুসলিম। আর তাই নিত্য অপমান, গঞ্জনা এবং বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাঁকে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে আত্মহত্যার কথা ভাবতে হচ্ছে। দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে এই অভিযোগ দায়ের করলেন দেশের অন্যতম সেরা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে নোটিস পাঠিয়েছে দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশন, খবর নিউজ পোর্টাল the wire সূত্রে।
দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনে পাঠানো অভিযোগ পত্রে সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ সোশ্যাল এক্সক্লুশন অ্যান্ড ইনক্লুসিভ পলিসি বা সিএসএসইআইপির সহকারী অধ্যাপিকা বছর ৪০ এর রোজিনা নাসির, জেএনইউয়ের উপাচার্য মানিদালা জগদেশ কুমার এবং সিএসএসইআইপির চেয়ারপার্সন জাগাতি চিন্না রাওয়ের বিরুদ্ধে হেনস্থা, শোষণ এবং ধর্মীয় ভেদাভেদের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ পত্রে রোজিনা নাসির আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এই দুই প্রবল ক্ষমতাশালী পুরুষ আমাকে চাকরি ছাড়ার জন্য লাগাতার চাপ দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমি আমার সন্তান এবং নিজের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। আমার ভয় হচ্ছে, যদি চাকরি ছেড়ে না দিই, তাহলে হয়ত নাজিবের মতো পরিণতি হবে আমারও’। জেএনইউ ক্যাম্পাসেই স্বামী এবং একমাত্র সন্তানের সঙ্গে থাকেন রোজিনা নাসির।
২০১৩ সালে জেএনইউতে যোগ দেওয়ার আগে ৪ বছর রোজিনা সহকারী অধ্যাপিকা হিসেবে পড়াতেন হায়দরাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে। তারপর জেএনইউতে ৬ বছর পড়ানোর পর তাঁর অভিযোগ, সমস্যা শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে। সেই সময় থেকে তিনি বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অধ্যাপিকার। শেষ পর্যন্ত দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। মামলায় জিতে বকেয়া বেতন আদায় করেন। যদিও তারপর ফের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁকে ক্লাস নিতে, এমফিল বা পিএইচডির জন্য ছাত্র ছাত্রী নিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট কানেকশন, ফোন ব্যবহার করতেও বাধা দেওয়া হয়। এমনকী ক্যাম্পাসের মধ্যে যে বাড়িতে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন, তাও খালি করার জন্য বারবার নোটিস পাঠানো হচ্ছে, অভিযোগ রোজিনা নাসিরের। আর এমন ব্যবহারের একমাত্র কারণ, তিনি মুসলিম, অভিযোগ অধ্যাপিকার। এক এক সময় মনে হয়, এই অপমান থেকে বাঁচার একটাই পথ, আত্মহত্যা। অভিযোগ পত্রে লিখেছেন রোজিনা নাসির।
জেএনইউ কর্তৃপক্ষ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, রোজিনা ইউজিসি প্রোজেক্টে কাজ করেন। তাই তাঁকে বেতন দেয় ইউজিসি, জেএনইউ না। কিন্তু রোজিনার দাবি, ইউজিসির এই প্রোজেক্টে আর যাঁরা দেশের অন্যান্য সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে কাজ করছেন, কাউকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি। তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রম।
রোজিনা নাসিরের অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে পয়লা অগাস্টের মধ্যে নোটিসের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। জবাব না দিলে উপাচার্য এবং সিএসএসইআইপির চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারপার্সন জাফারুল ইসলাম খান জেএনইউ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ২৬ শে জুলাইয়ের মধ্যে রোজিনা নাসিরের সমস্ত বকেয়া বেতন দিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাজধানীর বসন্তকুঞ্জ থানার স্টেশন হাউস অফিসারকে রোজিনা নাসিরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশন। রোজিনাকে অন্যায়ভাবে কোয়ার্টার থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা হলে পুলিশ বিষয়টি দেখবে বলেও জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন।