ভারতের ৯ বিলিওনিয়ারের সম্পদ ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার সম্পদের সমান, ২০২২ এর মধ্যে দেশে প্রতিদিন ৭০ জন মিলিওনিয়ার: অক্সফাম

অভূতপূর্ব ঝিমুনিতে আক্রান্ত ভারতের অর্থনীতি। ধনতেরাস-দীপাবলিতে যেমন ঢালাওভাবে বিকোচ্ছে বহুমূল্য মার্সেডিজ, কিলো কিলো সোনা, ঠিক তেমনই ক্ষুধা সূচকে আরও তলানিতে পৌঁছচ্ছে ভারত। খিদের জ্বালায় মাটি খেয়ে মৃত্যু হচ্ছে শিশুর। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা সত্যি করে দেশে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে বৈষম্য। ধনীরা আরও বড়লোক হচ্ছেন, আর একটু একটু করে দারিদ্রের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছেন দেশের সিংহভাগ গরিব মানুষ। এবার অক্সফামের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও সেই মাত্রাছাড়া বৈষম্যেরই বিপজ্জনক ইঙ্গিত।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের শীর্ষ ৯ বিলিওনিয়ারের (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি) মিলিত সম্পদের পরিমাণ দেশের তলার দিকের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার মিলিত সম্পদের পরিমাণের সমান। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে প্রতিদিন ৭০ জন নতুন ডলার মিলিওনিয়ার তৈরি হবে, এমন কথাও বলছে দ্য দাভোস রিপোর্ট ২০১৯ ‘পাবলিক গুড অর প্রাইভেট ওয়েলথ?’

অক্সফামের আগের রিপোর্টেও দেশে বৈষম্য বাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। এবারের রিপোর্টে সেই ইঙ্গিত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যায় আর্থিক দিক দিয়ে শুরুর প্রথম ১০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশের সামগ্রিক সম্পদের ৭৭.৪ শতাংশ। চমকে দেওয়ার মতো ব্যাপার হল, শীর্ষ ১ শতাংশ বড়লোকের হাতেই কুক্ষিগত দেশের ৫১.৫৩ শতাংশ সম্পদ। তলার ৬০ শতাংশ মানুষের হাতে মাত্র ৪.৮ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে জনসংখ্যার আর্থিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা ১ শতাংশের সম্পদ বেড়েছে ৩৯ শতাংশ, আর তলার ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। বর্তমান ভারতে মোট বিলিওনিয়ারের সংখ্যা ১১৯। গত বছর থেকে দেশে ১৮ জন বিলিওনিয়ার বেড়েছেন।

এই প্রথম দেশীয় বিলিওনিয়ারের মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গণ্ডী (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি)। ২০১৮ সালে তাদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩০,৮০৭ বিলিয়ন)। অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় বিলিওনিয়ারদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাজেটেরও ঢের বেশি। ২০১৮-১৯ সালে পেশ করা বাজেট ছিল ২৪,৪২২ বিলিয়ন টাকার।

গত ১২ মাসের মধ্যে ১১৯ জন ভারতীয় বিলিওনিয়ারের সম্পদ বেড়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৮০.২ বিলিয়ন (১১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। যা ভারতের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ কর থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের সমান।

কেবলমাত্র বৈষম্যের গাণিতিক পরিসংখ্যানই নয়, দাভোস রিপোর্ট বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে, ভারতে ভয়াবহ আকারে বৈষম্যের নেপথ্য কারণও। রিপোর্ট বলছে, সারা বিশ্বের অর্থনীতিরই আজ ভেঙে পড়ার অবস্থা। সেই প্রভাব এসে পড়ছে ভারতের উপরও। পাশাপাশি রয়েছে আরও একটি চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। তা হল, ভারতের মতো দেশে বিলিয়নিয়ার যেমন বাড়ছে, সেই তুলনায় বাড়ছে না মহিলা বিলিওনিয়ারের সংখ্যা। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের বিলিওনিয়ারদের মধ্যে মাত্র ৭.৫ শতাংশ মহিলা।

 

(অক্সফামের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, নারী-পুরুষে বিভাজন এবং অর্থনীতির উপর সেই বিভাজনের মারাত্মক প্রভাব। আগামীকাল বিশেষ প্রতিবেদন ভারতের অর্থনীতিতে লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনের প্রভাব নিয়ে।)

Comments are closed.