ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বিধ্বস্ত করেছে ভারতের অর্থনীতিকে। আবাসন, খনি, টেলিকম শিল্পপতিদের সম্পদ বেড়েছে লাগামছাড়া হারেঃ অক্সফাম

কিছুদিন আগেই অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছিল, দেশের সবচেয়ে বিত্তবান ৯ জনের হাতে যে পরিমাণ সম্পদ আছে তা ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের সমান। দেশের সবচেয়ে বড়লোক ১০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে ভারতের মোট সম্পদের ৭৭.৪ শতাংশ। আর এর মধ্যে ১ শতাংশ মানুষের হাতেই রয়েছে দেশের মোট সম্পদের ৫১.৫৩ শতাংশ সম্পদ!
কিন্তু কোন সেক্টর বা কী ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির সম্পদ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে? অক্সফামের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে উঠে আসছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিত্তবান হয়েছেন ‘রেন্ট থিক’ সেক্টর এবং ‘নলেজ-বেসড’ সেক্টরের মালিকরা। ‘রেন্ট থিক’ সেক্টর বলতে বোঝায়, আবাসন শিল্প, নির্মাণ শিল্প, খনিজ শিল্প কারবারি, সিমেন্ট, টেলিকম এবং মিডিয়া শিল্প, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ে উঠেছে এবং যার জন্য সরকারের অনুমতির দরকার হয়। এই শিল্পগুলি গত এক বছরে বিশাল পরিমাণ অর্থ লাভ করেছে। অন্যদিকে, ‘নলেজ বেসড’ সেক্টর, যেমন, তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পও পাল্লা দিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে শেষ কয়েক বছরে।
এই ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর সৌজন্যে দেশের বিত্তবানরা আরও সম্পদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। আর এই পুঁজিবাদী শিল্পে নানান দুর্নীতি বিধ্বস্ত করেছে দেশের অর্থনীতিকে, তৈরি করেছে অর্থনৈতিক অসাম্যের। রিপোর্টে প্রকাশ, টু জি স্পেক্ট্রাম কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারির ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে শেষ কয়েক বছরে। অন্যদিকে, সস্তায় জমি এবং তা ব্যবহারের জন্য সহজেই সরকারের অনুমতি পেয়ে পেয়ে ব্যবসা করা শিল্পপতিরা ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন।
২০০৪ সালে দেশের ১৩ জন ধনকুবেরের মধ্যে ২ জন ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ী ও দু’জন ছিলেন তথ্য প্রযুক্তই সংস্থার মালিক। বাকি ৯ জন শিল্পপতি ছিলেন আবাসন, নির্মাণ, খনিজ, সিমেন্ট, টেলিকম ইত্যাদি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ২০১০ সালে ছবিটা ছিল একটু ভিন্ন। দেশের প্রথম সারির ৬৯ জন শিল্পপতির মধ্যে ১১ জন শিল্পপতি ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের সঙ্গে এবং মাত্র ৬ জন ছিলেন তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে, নির্মাণ শিল্প ও আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১৮ জন ব্যবসায়ী বিশেষ লাভবান হয়েছিলেন। ৭ জন শিল্পপতি খনিজ ও তেল ব্যবসায় এবং ২ জন শিল্পপতি টেলিকম ব্যবসা করে বিশেষ লাভবান হন।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল ফোর্বস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশের ধনকুবেরদের সম্পদ পরিমাণের একটা ইঙ্গিত দিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শেষ এক দশকে বিপুল পরিমাণ বেড়েছে ধনীদের সম্পত্তি। দেশের জিডিপির ১৫ শতাংশ রয়েছে এই শিল্পপতিদের হাতে। বিশেষ করে যে ব্যবসায়ীরা বংশ পরম্পরা ব্যবসা করছেন এদেশে, গত ৫ বছরে তাঁদের বিশেষ শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে।
গান্ধী ও ওয়াল্টন রিপোর্ট অনুসারে, ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশের বড় শিল্পপতিদের সম্পত্তি ৫ শতাংশ জিডিপি-র কম ছিল। এই সূচক ২০০৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২২ শতাংশ। তবে ২০১২ সালে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার ফলে তা প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়। বর্তমানে, ধনকুবেরদের সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেশের জিডিপি’র ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৫ বছরে তাঁদের সম্পত্তি লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিদিন ৭০ জন করে ধনকুবের এদেশে বাড়বে বলে জানিয়েছে অক্সফাম।

Comments are closed.