ক’দিন আগেই ট্যুইট করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রচার বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর। দাবি ছিল, বিজেপি দুই অঙ্ক পেরোতে হিমশিম খাবে। জানিয়েছিলেন, তাঁর কথা না মিললে পেশা ছেড়ে দেবেন। ইংরেজি নিউজ চ্যানেল টাইম্স নাওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিকে আবার জানালেন একই কথা। কোনও রাখঢাক না রেখে তাঁর দাবি, আবার বলছি, বিজেপি ৯৯ পেরোলে রাজনৈতিক ময়দান ছেড়ে দেবো।
লোকসভায় দুর্দান্ত ফল করা ভারতীয় জনতা পার্টি যখন ২০২১ এর ভোটে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছে তখন প্রশান্ত কিশোর ট্যুইট করে দাবি করেন, বিজেপি ১০০ পেরোতে হিমশিম খাবে। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে এই দাবি পিকের?
টাইম্স নাওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিকে বললেন ত্রিফলার কথা। তাঁর দাবি, প্রথমত বাংলা জেতার সবচেয়ে বড়ো ধাপ হল বড়ো জেলায় জয়। বিজেপি লোকসভায় ১৮ আসন পেয়েছে বটে কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা মুর্শিদাবাদ, রাজ্যের বড়ো কোনও জেলাতেই একক ক্ষমতায় জয় পায়নি। এর একটি বড়ো কারণ হল, বাকিরা যেখানে রাজ্যের ১০০ শতাংশ মানুষের সমর্থন পাওয়ার জন্য ঝাঁপাচ্ছে সেখানে বিজেপি রাজ্যের ৭০ শতাংশ মানুষকে টার্গেট করছে। স্বাভাবিকভাবে বাংলা জিততে হলে বিজেপির স্ট্রাইক রেট হতে হবে অনেক বেশি, বাস্তব পরিস্থিতি সেই কথা বলছে না বলে দাবি পিকের।
দ্বিতীয়ত, লোকসভার পর থেকে বিধানসভার আগে পর্যন্ত সময়ে তৃণমূল যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছেছে তা ক্ষত মেরামতিতে প্রভূত সাহায্য করবে বলে বিশ্বাস পিকের। তৃতীয় তথা শেষ সূত্র হলেন মমতা ব্যানার্জি। পিকের কথায়, মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী হিসেবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। বস্তুত বাংলায় তাঁর চেয়ে বড়ো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেই। তাঁর আবেদন এবং জনসংযোগ এই মুহূর্তে আনপ্যারালাল।
মূলত এই ৩ সূত্রে ভর করে বাংলায় তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি। বিজেপিকে ১০০ পেরোতেও বহু ঘাম ঝরাতে হবে বলে দাবি পিকের।
পিকের মতে বাংলার বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করার পরিবর্তে বিজেপি মূলত নির্ভর করছে ন্যারেটিভ তৈরির উপর। পাশাপাশি পরিসংখ্যান দিয়ে প্রশান্ত কিশোরের দাবি, যে কোনও রাজ্যের বিধানসভা ভোটে শুরুতেই একটা কঠিন লক্ষ্য বেঁধে দেন অমিত শাহ। দিল্লি থেকে বিহার সেই ট্র্যাডিশন চলছেই। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অমিত শাহ ঘোষিত লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি গেরুয়া শিবির। বাংলার ক্ষেত্রে তেমনই ২০০ আসনের অবাস্তব লক্ষ্য কর্মীদের কাছে দিয়েছেন অমিত শাহ। পিকের মতে এটা আসলে কর্মীদের চাঙা করার মন্ত্র।
বিজেপি যদি ১০০ এর বেশি আসন পায় তাহলে রাজনৈতিক ময়দান ছাড়বেন বলে যে দাবি করেছেন তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রশান্ত কিশোর। টাইম্স নাও চ্যানেলের গ্রুপ এডিটর নভিকা কুমার তাঁকে প্রশ্ন করেন, বিজেপি ১০০ সিট পেলে পেশা ছেড়ে কি সরাসরি রাজনীতিতে নামবেন? পিকের জবাব, আমি তো রাজনৈতিক কৌশল রচনা করি। যদি কৌশল রচনায় ভুল হয় তাহলে কি আমার সরে যাওয়া উচিত নয়? তাই আবার বলছি, বাংলায় বিজেপি ৯৯ পেরোলে রাজনীতির ময়দান ছেড়ে দেবো।
Comments are closed.