ব্রিটিশ সরকারকে টেক্কা দিয়ে গোটা শ্রীরামপুরটাই কিনে নিতে চেয়েছিলেন, বাঙালি ধনকুবের রঘুরাম গোস্বামীকে চেনেন? 

আজকের শ্রীরামপুরকে তো চেনেন অনেকেই। এক সময় ড্যানিসদের উপনিবেশন পরে ইংরেজরা অধিগ্রহণ করে। মাহেশের রথ, এশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের দ্বিতীয় কলেজে (শ্রীরামপুর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়), ভারতের প্রথম গ্রন্থাগার, ভারতের প্রথম কাগজকল সহ একগুচ্ছ নানান কারণে হুগলি নদীর ডান তীরে অবস্থিত প্ৰসিদ্ধ এই জনপদ একটি পরিচিত নাম। ইতিহাসপ্রেমীদের অনেকেই এখন একদিনের ছুটিতে ঢুঁ মারেন শ্রীরামপুরে। মাহেশের রথ, শ্রীরামপুর কলেজ, শ্রীরামপুর রাজবাড়ী, সহ একগুচ্ছ ঐতিহাসিক পর্যটন স্থল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এখানে। কিন্তু জানেন কী, প্রাচীন এই জনপরদের সঙ্গে এক বিখ্যাত বাঙালি ধনকুবেরের কীর্তিও জড়িয়ে রয়েছে। ড্যানিসরা যখন ১৮৪৫ সালে তাঁদের উপনিবেশ ফ্রেড্রিক নগর অর্থাৎ আজকের শ্রীরামপুর বিক্রি করে দিচ্ছে, সে সময় এই বাঙালি ব্যবসায়ী একা শ্রীরামপুরটা কিনে নিতে চেয়েছিলেন। এবং সমগ্র ব্রিটিশ সরকার যে দামে শেষ পর্যন্ত শ্রীরামপুর কেনে তার থেকে মাত্র ১ লক্ষ টাকা কম দাম দিয়েছিলেন তিনি। যদিও অনেক ঐতিহাসিক একথা বলেন, ব্রিটিশরা এক প্রকার জোর করেই ড্যানিসদের থেকে শ্রীরামপুর অধিগ্রহণ করে। 

শ্রীরামপুরের যে বিখ্যাত রাজবাড়ী, যা গোস্বামী বাড়ি নামেও পরিচিত। সেই গোস্বামী বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রঘুরাম গোস্বামী। বঙ্গদেশে গোস্বামীদের বিপুল আর্থিক প্রতিপত্তির অন্যতম স্থাপিত ছিলেন রঘুরাম গোস্বামী। শ্রীরামপুরে এই বংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, এই বংশের আদিপুরুষ রামগোপাল গোস্বামী তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে নদিয়ার শান্তিপুর থেকে নৌকা করে তীর্থ করতে যাচ্ছিলেন। বাংলার নবাব তখন আলীবর্দী খাঁ।  গোস্বামী দম্পতি যখন শ্রীরামপুরের কাছ থেকে যাচ্ছিলেন, সেই সময় মাতৃত্ব বেদনায় কাতর হয়ে ওঠেন মনোরমা দেবী। শ্রীরামপুরেই জন্ম নেন রাম গোবিন্দের সন্তান রামগোপাল গোস্বামী। 

রাম গোবিন্দের মতো পন্ডিত মানুষের শ্রীরামপুরে পা দিয়েছেন এবং এক ব্রাহ্মন সন্তানের জন্মগ্রহণ হয়েছে, এই খবর পেয়ে আপ্লুত হয়ে শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায় তাঁর শ্রীরামপুরের ওই জমি এবং কুটীরটি রাম গোবিন্দ গোস্বামীকে দান করতে চাইলেন। যদিও রাজার দান নিতে তিনি অস্বীকার করেন। পরে একটি মাত্র স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে রাম গোবিন্দ গোস্বামী ওই কুটীর ও জমি শেওড়াফুলির রাজার কাছ থেকে কিনে নেন। এই ভাবেই শ্রীরামপুরে গোস্বামী পরিবারের পথ চলা শুরু।  

এই রামগোবিন্দ গোস্বামীর দুই পুত্র রামগোপাল ও রাধাকান্ত। রাধাকান্ত গোস্বামীরও দুই সন্তান ছিল রামনারায়ণ ও হরিনারায়ণ। এবং এই হরিনারায়ণের দুই সন্তান রাঘবরাম গোস্বামী এবং রঘুরাম গোস্বামী। বাবা হরিনারায়ণ গোস্বামী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান ছিলেন। পাশাপাশি ড্যানিসদের সঙ্গে ব্যবসা করে সে সময় হরিনায়রণ প্রভূত অর্থ রোজগার করেন। সামাজিক কাজেও হরিনারায়ণ প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন।  

এই হরিনারায়ণের পুত্র রঘুরাম গোস্বামীও প্রথমে জীবনে ‘চাকরি’কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি সে সময়কার বিখ্যাত পামার কোম্পানির মুৎসুদ্দি ছিলেন। পরে বাবার মতো নিজেও ব্যবসা শুরু করেন। এবং সেই ব্যবসায় এত বিশাল পরিমাণ অর্থ রোজগার করেছিলেন যে, ১৮৪৫ সালে যখন ড্যানিসরা শ্রীরামপুর বিক্রি করে দিতে চাইছে তিনি তখনকার দিনে ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তা কিনে নিতে চেয়েছিলেন। যদিও পরে ব্রিটিশ ১৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শ্রীরামপুর অধিগ্রহণ করে।  

  

Comments are closed.