করোনিল নামে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক প্রকাশ্যে এনে কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে পতঞ্জলি। আয়ুষ মন্ত্রক ওই ওষুধের গুণমান যাচাই করছে। যদিও এই প্রথম নয়, আগে বহুবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ রামদেবের সংস্থার অনেক প্রকল্পই সরকারি তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তার গুণমানের। এমনকী পণ্যের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দেওয়ায় একবার ১১ লক্ষ টাকা জরিমানাও দিয়েছে রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ।
সেই ২০১৪ সাল থেকে ভারতে স্বদেশি পণ্যের কেনাবেচায় উৎসাহ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করার সুযোগ পায় পতঞ্জলি। যদিও এই পরিকল্পনার বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি সরকারি হস্তক্ষেপেই। আবার যোগগুরু রামদেবের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব খারিজও করেছে মোদী সরকার।
২০১৫ সালে খাদি ও গ্রামীণ শিল্পের উন্নতি সাধনে বাণিজ্যকরণ থেকে গুণমাণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার পুরো দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে নিতে চায় পতঞ্জলি। এ নিয়ে কেন্দ্রের এমএসএমই মন্ত্রকের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা চালায় রামদেবের সংস্থা। যদিও সেই প্রস্তাব পরে খারিজ হয়ে যায়। এমএসএমই মন্ত্রকের তৎকালীন মন্ত্রী কলরাজ মিশ্র জানিয়ে দেন, খাদির নিজস্ব পরিচিতি আছে, সেগুলি কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার হাতে দিলে সেই স্বাতন্ত্র্যের বিকৃতি ঘটতে পারে।
এরপর ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মিড ডে মিল সরবরাহ প্রকল্পের একটা অংশের দায়িত্ব পায় রামদেবের সংস্থা। সে রাজ্যের ১০ কোটি শিশুর মিড ডে মিলে ঘি, ময়দা, চিনি সহযোগে তৈরি পঞ্জিরি, ফল ও দুধ যোগান দেওয়ার দায়িত্বভার চূড়ান্ত হওয়ার মুখেই যোগী সরকারের তরফে আচমকা খারিজ করে দেওয়া হয় চুক্তি।
এরপর, রামদেব ও সহযোগী তথা পতঞ্জলির সিইও আচার্য বালাকৃষ্ণ সরকারি প্রকল্পের আওতায় হরিদ্বার ঘাটকে দত্তক নিতে চান। কিন্তু অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে রামদেবের এই প্রস্তাবও খারিজ হয় কাজে গড়িমসির জন্য।
ঠিক একইভাবে দক্ষিণ ভারতে পতঞ্জলির বৈদিক সম্প্রচার আটকে যায় তাদের তিনটি টিভি চ্যানেল সরকারি ছাড়পত্র না পাওয়ায়। প্রায় তিন বছর সেই আবেদন ঝুলে ছিল বিভিন্ন বিধিনিয়মের জন্য। অবশেষে গত বছর সেই লাইসেন্স মেলে।
এরপর পতঞ্জলির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে নয়ডায় ২ হাজার কোটি টাকার ফুড পার্ক প্রকল্প আটকে গিয়েছিল। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রক পতঞ্জলির আবেদনপত্রে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করে। অবশেষে যোগী আদিত্যনাথ সরকার সেই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেয়।
পতঞ্জলি সিইও বালাকৃষ্ণ সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, একাধিক রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েছেন তাঁরা। তবে তার দায় অনেকটা সরকারি আধিকারিকদের ঘাড়ে চাপাতে চান তিনি। এখন অবশ্য কৃষি মন্ত্রকের সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রকের ‘সুসম্পর্ক’ তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বালাকৃষ্ণ।
অফিসারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে রামদেবের সংস্থা ও কেন্দ্রের একটি দল এখন উপজাতিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জড়িবুটিকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহারের ব্যাপারে গবেষণা চালাচ্ছে। উপজাতিদের জৈব চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পতঞ্জলি। এইভাবে মোদী সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কৃষকদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ করার ব্যাপারে তাঁরা সচেষ্ট বলে জানান পতঞ্জলির সিইও।
এদিকে রামদেবের যোগ এবং স্বদেশী পণ্য প্রচারের প্রচেষ্টাকে বারবার প্রশংসা করে এসেছে কেন্দ্রের বিজেপি থেকে সঙ্ঘ পরিবার। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে দশজন মূল বক্তার মধ্যে একজনের নাম বাবা রামদেব। তাঁদের বক্তব্য এক সপ্তাহ ধরে সম্প্রচার করে আয়ুষ মন্ত্রক। ২০১৭ সালে উত্তরাখণ্ডে পতঞ্জলির কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের তৈরি পণ্য প্রকাশ্যে সমর্থন করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও সঙ্ঘ পরিবার সদা সতর্ক। এমনকী সপ্তাহ দুয়েক আগে যখন সবাইকে চমকে দিয়ে পতঞ্জলি জানিয়ে দেয় সাতদিনের মধ্যে করোনা প্রতিষেধক নিয়ে আসছে তারা তখনও কেন্দ্র নিশ্চুপ ছিল।
Comments are closed.